BK Murli 14 May 2016 In Bengali

bk murli today

Posted by: BK Prerana

BK Prerana is executive editor at bkmurlis.net and covers daily updates from Brahma Kumaris Spiritual University. Prerana updates murlis in English and Hindi everyday.
Twitter: @bkprerana | Facebook: @bkkumarisprerana
Share:






    BK Murli 14 May 2016 In Bengali

     ১৪-০৫-২০১৬ প্রাতঃ মুরলী ওম্ শান্তি "বাপদাদা" মধুবন


    "মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা - তোমরা তোমাদের যাবতীয় সমস্ত কিছুই ঈশ্বরীয় সেবায় নিয়োগ করে সফল হও এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ বানিয়ে নাও। যেহেতু মহা- বিনাশের মৃত্যু যে আজ শিয়রে হাজির।"

    প্রশ্ন :- 

    জ্ঞানের পাঠ শোনা সত্ত্বেও, তোমাদের বাচ্চাদের মনে সেই জ্ঞানের ধারণা- সেভাবে হয় না কেন ?

    উত্তর :- 

    এর কারণ- বাচ্চাদের সেভাবে বিচার সাগর মন্থন করার ধারনাটাই পাক্কা হয় না। তাই তাদের বুদ্ধিযোগ দেহ এবং দেহ সম্বন্ধেই আটকে থাকে। আর যখন বুদ্ধি মোহ-বন্ধন থেকে মুক্ত হবে, তখনই তাদের বুদ্ধিতে তারা এ ব্যাপারে কিছু ধারণা করতে পারবে। মোহ এমনই এক জিনিস- যা বিকারী-বাঁদর-তুল্য। ফলে মুখ কালো (পাপী) বানিয়ে দেয়। তাই বাবা প্রথমেই বাচ্চাদের এই প্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়ে দেন যে , "দেহের সঙ্গে দেহের যাবতীয় সম্বন্ধকে ভুলে একমাত্র আমাকেই স্মরণ করো। "

    গীত :- 

    "ভোলানাথ সে নিরালা কোই নেহী আউর নেহী।"
    (ভোলানাথের মতন আর কেউ-ই হতে পারে না।)

    ওম্ শান্তি। 

    বাবা বাচ্চদেরকে এই কথা বোঝাচ্ছেন যে, বাচ্চারা এখন তো তোমরা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরে গেছে যে, বেহদের এই বাবাকেই বলা হয়, যিনি দুর্ভাগ্যকে বদলে দিয়ে সৌভাগ্য দান করেন। কৃষ্ণ কিন্তু দুর্ভাগ্যকে বদলে দিতে পারে না। গীতার ভগবানও কিন্তু কৃষ্ণ নন। গীতার ভগবান -পরমপিতা পরমাত্মা শিব। শিববাবা হলেন রচনাকার আর কৃষ্ণ হলেন তাঁরই রচনা। যিনি স্বর্গের অধিকারী বানান, তিনিই তো স্বর্গের রচয়িতা হবেন। এটাই ভারত-বাসীদের সবথেকে বড়ো ভুল যে তারা কৃষ্ণকেই সবকিছুতে উঁচু স্থানে বসিয়ে দিয়েছে। অথচ, শ্রীকৃষ্ণকে তো কেউ বাবা বলে না। আশীর্ব্বাদের বর্ষা বা সম্পত্তির অধিকার তো একমাত্র এই শিব- বাবার থেকেই পাওয়া যায় এবং পূর্বেও এই ভারতবাসীরাই তা প্রাপ্ত করেছিলো। শ্রীকৃষ্ণ তো হলেন (শাহজাদা) রাজকুমার আর রাধা (শাহজাদী) রাজকুমারী এই প্রবাদ একমাত্র এই ভারতেই আছে। প্রকৃত মহিমা-কীর্তণ কিন্তু একমাত্র সর্বোচ্চ শিব-বাবারই। শ্রীকৃষ্ণ তো হলেন বাবার সর্বোচ্চ রচনা যিনি এই বিশ্বের মালিকানা পান। আর তাঁর সম্রাজ্যকে বলা হয় সূর্যবংশী দৈবী-সম্রাজ্য। গীতা ইত্যাদি এ সব হলো আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের পুঁথি-শাস্ত্র। কিন্তু, সত্যযুগে তো কাউকে জ্ঞান শোনানো হয় না। একমাত্র এই সঙ্গম- যুগেই শিববাবা স্বয়ং এসে এই জ্ঞান দান করেন। ছবি দেখিয়ে তোমাদেরকে এই কথাই প্রথমে সিদ্ধ করতে হবে। দুইজনের ছবিই একসাথে দেখাও আর বলো,- ভগবান শিব ইনিই হলেন গীতার ভগবান, যিনি সম্পূর্ণ সৃষ্টিচক্রের রচয়িতা। ইনি জন্ম-মৃত্যুরহিত। অথচ, শ্রীকৃষ্ণ কিন্তু তা নন। শ্রীকৃষ্ণ হলেন শিববাবার এক উৎকৃষ্ট রচনা। তোমরা জানবে যে এই শিববাবাই তোমাদেরকে এমন হীরে তুল্য বানান। "হীরে তুল্য- কড়ি তুল্য" এই ধরনের প্রবাদও তো আছে। তোমাদের বাচ্চাদের যুক্তিতে- বুদ্ধিতে এই কথাগুলি যথার্থ ভাবে অবশ্যই থাকা উচিত যে, বাবার আদেশই হলো - "তুমি একমাত্র আমাকেই স্মরণ করো এবং আমার আশীর্ব্বাদের বর্ষাকে স্মরণ করো।" যেহেতু, ইনি হলেন বেহদের বাবা। আর কৃষ্ণ হলেন এই জগৎ-পৃথিবীর মালিক। যদিও কৃষ্ণই এই বিশ্বের রাজা হন, শিববাবা নন। বাস্তবে গীতার তো অনেক মহিমা-কীর্ত্তণ। তার সঙ্গে সঙ্গে ভারতেরও এত অনেক মহিমা ছিল। এই ভারতই ছিল সর্ব-ধর্মের সমন্বয়ের তীর্থস্থান। কিন্তু কৃষ্ণের নাম তাতে জুড়ে দেবার জন্য এর মহত্বটাই কমে গেছে। এই কারণেই ভারত কড়ি তুল্য মূল্যহীন হয়ে গেছে। বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের অবিনাশী নাটকের চরিত্র হিসাবে এ সবই তো অবশ্যই হতে হবে। তবুও বাবাকে তা সাবধান তো করতেই হয়। আর বাচ্চাদের কথা ভেবে, বাবাও খুব ভালো করে তা বোঝান। দিন প্রতিদিন বাবা অনেক গুহ্য-রহস্যের কথাও জানান, তখন সময় উপযোগী পুরনো ছবি বদল করে আবার নতুন ছবিও বানাতে হয়। এই ধরনের ঘটনা তো অন্তকাল অবধি ঘটতেই থাকবে। শিববাবা যে তোমাদেরকে আশীর্ব্বাদের বর্ষা দিচ্ছেন, এই কথা তোমরা বাচ্চারা যেন খুব ভালোভাবে ধারণ করতে পারো। তাই তো তোমাদেরকে বার বার বলা হয়ে থাকে, একমাত্র আমাকেই (মামেকম্) স্মরণ করো, তাহলেই তোমাদের সব বিকর্মগুলি বিনাশ হবে। কৃষ্ণকে স্মরণ করলে তো আর বিকর্ম বিনাশ হবে না। কারণ কৃষ্ণ তো আর সর্বশক্তিমান নন। সর্বশক্তিমান এক আর একমাত্র শিববাবাই। তিনিই আমাদেরকে আশীর্ব্বাদের বর্ষা বা সম্পত্তি দিয়ে থাকেন। তবুও কিন্তু অনেক মানুষ্যই কৃষ্ণকেই স্মরণ করে। আচ্ছা কৃষ্ণের কথাই যদি ধরো, কৃষ্ণও তো সেই একই কথা বলেছিলো। এই কৃষ্ণই বলেছিলো, দেহ সমেত দেহের সর্ব সম্বন্ধকে ছেড়ে, একমাত্র (মামেকম্) আমাকেই স্মরণ করো। কিন্তু যুক্তি অনুসারে আত্মা তো তার বাবাকেই স্মরণ করবে,- তাই না ? কৃষ্ণ তো আর সর্ব আত্মার বাবা নন। এইসব বিচার সাগর মন্থন করে, যুক্তির দ্বারা বুদ্ধিতে তা ধারণ করা উচিত। কেউ কেউ মোহের বশে বশীভূত হওয়ার কারণে এই জ্ঞান সেভাবে সঠিকভাবে ধারণ করতে পারে না। তোমরাই তো এতদিন তা বলে এসেছো - বাবা, আমরা সর্ব সম্বন্ধকে ছেড়ে দিয়ে এক তোমার সঙ্গেই সম্বন্ধ জুড়বো। আমার তো এক মাত্র বাবাই আছেন, আর দ্বিতীয় আর কেউ নেই। কিন্তু মোহ এমনই জিনিস যা তোমাদের বারে বারে কালো মুখ করে বিকারী বাঁদর বানিয়ে দেয়। বাঁদরের মধ্যে মোহ আর লোভ অনেক বেশী পরিমানে দেখা যায়। ধনী- সাহুকার লোকেদেরও একথা বোঝানো হয় যে এখন তারাও মৃত্যু সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাই তোমাদের অর্থ-সম্পত্তি সব এখন ঈশ্বরীয় সেবায় লাগাও এবং নিজেদের ভবিষ্যৎকে স্বার্থক করে তোলো। তবুও কিন্তু তারা বাঁদরের মতো সব কিছুতেই আটকে পড়ে থাকে, তাই কিছুই ছাড়তে পারে না তারা। তাই বাবা তোমাদের বলেন যে - দেহের এবং দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত সম্বন্ধকেই যুক্তি দ্বারা বুদ্ধিযোগ দিয়ে তাকে হাটাও। আর একমাত্র শিববাবার শ্রীমতে অনুসারেই চলো। কিন্তু তোমরাই আবার বলো যে, এইসব ধন-সম্পত্তি, সন্তান-সন্ততি সবই তো ঈশ্বরই দিয়েছেন। কিন্তু এখন তো বাবা স্বয়ং নিজে এসেছেন, আর তিনি স্বয়ং যেখানে বলছেন যে, এইসব ধন দৌলত ইত্যাদি সমস্ত কিছুই তো শেষ হয়ে যাবে, মহা বিনাশের কারণে। কারো- কারো শরীরও মাটিতে মিশে যাবে। ভূমিকম্প-প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদিও হবে বিশাল আকারে, তাতে সমস্ত কিছুই তো শেষ হয়ে যাবে। যেমন, এরোপ্লেন যখন ভেঙে পড়ে, বা কোথাও বড়ো আকারে আগুন লাগলে- পুলিশ আসার আগেই অনেক সময় চোরও ঢুকে যায়। তাই বাবা বুঝিয়ে বলেন যে, বাচ্চারা- কোনও দেহধারীদের প্রতিই কোনও প্রকারের মোহ রেখো না। কারণ তোমাদেরকেই মোহজিৎ হতে হবে। এই দেহ অভিমানই হল তোমাদের এক নম্বরের শত্রু। দেবতারা কিন্তু দেহী-অভিমানী হয়। এখন তোমাদেরকেও দেহী অভিমানী হবার অভ্যাসে অভ্যাসী হতে হবে। সাধারণ মানুষেরা তো এইসব কথা জানেই না। না তারা পরমাত্মাকেও সঠিকভাবে জানতে পারে। আত্মা কে ? পরমাত্মাই বা কে ? একই আত্মা সে কতবার বা জন্ম নেয়। কিভাবে তারা তাদের কর্ম-কর্তব্যের অভিনয় করে ? - এই বিশ্ব রঙ্গমঞ্চে তোমরা সকলেই হলে অভিনেতা। এইসব খবর তো কেউই তা জানে না। তাই তাদেরকে নির্ধনী, ও অনাথ বলা হয় l সাধারনতঃ মানুষেরা বলে যে, আত্মা জ্যোতিতে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু আত্মা তো আসলে অবিনাশী। আর এই আত্মার মধ্যেই মানুষের তার কর্ম-কর্তব্যের ৮৪- জন্মের অভিনয়ের পার্ট ভরা থাকে। আবার অন্যভাবে তারাই বলে যে, আত্মা হলো আকাশের তারার মতো। আসলে তারা নিজেরাই কিন্তু এ ব্যাপারে কিছু বুঝতেই পারে না। তাই তারাই আবার এও বলে আত্মাই হলো পরমাত্মা। আসলে তারা বাবাকেই ঠিকমতো জানে না। আত্মার ব্যাপারে বলে যে, ভ্রুকুটির ভিতর চকচকে একটি তারার মতো, কিন্তু পরমাত্মার জন্য তো তারা কিছুই বলে না। প্রকৃত পক্ষে শিববাবাকেই পরমাত্মা বলা হয়, তিনি পরমধামে থাকেন। পরমাত্মাও আকারে খুব ছোটো একটি বিন্দু-স্বরূপ। পরমাত্মা একজনই, পুনর্জন্ম রহিত। কিন্তু আত্মারা পুনর্জন্মতে আসে। অথচ, পরমাত্মার জন্য বলা হয়, তিনি হলেন জ্ঞানের সাগর, আনন্দের সাগর, পবিত্রতার সাগর। প্রশ্ন জাগে- দেবতাদের এই এত গুণের আশীর্ব্বাদের বর্ষা তবে কে দিয়েছিল ? তা তো একমাত্র এই শিববাবাই। যিনি সর্বগুণ সম্পন্ন, ১৬ কলা সম্পূর্ণ। এমন কোনও দেবতা তো এখানে আর কেউই নেই। দেবতাদের এই গুণের বর্ষা কোথা থেকে তা পেয়েছিলো যা কিন্তু আর কেউই জানে না। বাবাই নিজে এসে তা খোলসা করে বোঝান যে, তাঁকেই সেই জ্ঞানের সাগর বলা হয়। এই সঙ্গম যুগেই বাবা এসে সে সব জ্ঞান দেন, যা তারপরে এই জ্ঞান প্রায় লোপ পেয়ে যায়। তারপর আবার যখন ভক্তিমার্গ শুরু হয়, তখন এই ভক্তিকে কিন্তু আর সেই জ্ঞান বলা যাবে না। এই জ্ঞানের দ্বারাই মনুষ্যের সদ্গতি হয়। তারপর যখন আবার মানুষের দুর্গতি হয়- তখন আবার সবার সদ্গতিদাতা, জ্ঞানের সাগর এই ধরায় আসেন। এই শিববাবাই এসে আবার সকলকে জ্ঞান-স্নান করান। গঙ্গা স্নান তো হলো সাধারণ জলে স্নান, প্রকৃত অর্থে যার দ্বারা মানুষের কোনো সদ্গতিই হয় না। এই ধরনের কথাও যুক্তিসহ তোমাদের বুদ্ধিতে অবশ্যই ধারণ করা উচিত। তাই ভালো ভালো মুখ্য ছবিগুলিকে বড় করে বানাও। যাতে সবাই তা ভালোভাবে বুঝতে পারে। তাতে অক্ষরগুলিও বড় বড় করে লেখো। তবে যারা ছবি বানাবে তাদের বুদ্ধিতেও এই সব কথা থাকা উচিত। কাউকে যদি ডাকতে চাও, তাহলে তাদেরকে নিমন্ত্রণ পত্র দাও, আর বলো, তোমরা এসে পরমপিতা পরমাত্মার পরিচয় জানো, আর ভবিষ্যৎ ২১ জন্মের জন্য বাবার থেকে আশীর্ব্বাদের বর্ষা (সম্পত্তি) প্রাপ্ত করো। ভাই বোনেরা, তোমরা বাবার থেকে সেই বেহদ সুখের স্বরাজ্য কেমন করে পাবে, তা এখানে এসে সকলে বোঝো। বেহদের বাবার থেকে এই আশীর্ব্বাদের বর্ষা কিভাবে পাওয়া যায় তা শেখো। এতে কারওরই কোনও ভয়ের কোনো কারণ নেই। সবাই তো এই বাবাকেই ডাকতে থাকেন- হে পতিত পাবন এসো। বাবাও তাদেরকে বলেন যে - কামভাবই হলো মনুষ্যের মহাশত্রু। আগামীতে সেই পবিত্র দুনিয়ায় যেতে গেলে তোমাদের অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। যারা বিকারের থেকে জন্ম নেয় তাদেরকে পতিত বলা হয়। সত্যযুগ আর ত্রেতাযুগে কোনো বিকারের বিষ থাকে না, তাই সেই দুনিয়াকে বলা হয় সম্পূর্ণ নির্বিকারী দুনিয়া। সেখানে বিকারের নামমাত্রও থাকে না। তাহলে তোমরা কেন আবার জিজ্ঞেস করো যে, সেখানে বাচ্চা কিভাবে জন্ম নেয় ? আগে তোমরা নিজেরা তো নির্বিকারী তৈরী হও, বাচ্চা যেভাবে হবার সেভাবেই হবে। অযথা তোমরা এইসব কথা জিজ্ঞেসই বা কেন করো ? তোমরা কেবলমাত্র বাবাকে স্মরণ করলেই তোমাদের জন্ম-জন্মান্তরের পাপ ভষ্ম হয়ে বিনষ্ট হয়ে যাবে। বর্তৃানের এই দুনিয়াটাই হলো পাপাত্মাদের দুনিয়া। আর সত্য এবং ত্রেতাযুগ হলো পুণ্য আত্মাদের দুনিয়া। এই সব কথা যুক্তি ও বুদ্ধিতে খুব সুন্দরভাবে বসিয়ে নেওয়া উচিত। ভক্তির ফল স্বয়ং ভগবান এসেই দেন। বাবা এসেই সবার সদ্গতি করেন আর তার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে স্বর্গের রাজত্বও দান করেন। তাই তো বাবা এত ভাবে বুঝিয়ে বলেন যে- এখন তোমরা পবিত্র হও, আর সে নিমিত্তেই, যতটা পারো, আমাকে স্মরণ করো, -এটাই হলো মূল মহামন্ত্র। তবেই তো বাবার থেকে অবশ্যই তোমাদের আশীর্বাদের বর্ষা মিলবে। বাবা আরো বলেন, তোমরা যদি আমাকে স্মরণ করো তাহলে তোমরা সতোপ্রধান অবস্থায় আসতে পারবে। মনুষ্য আত্মার উত্থান-পতনের ৮৪ জন্মের সিঁড়ি সম্বন্ধেও মানুষদেরকে তা বোঝাতে হবে। দিন প্রতিদিনই প্রতিটা জিনিসেরই পরিবর্তন হচ্ছে, এটাও পরিষ্কার করে তোমাদের লিখতে হবে। ব্রহ্মার দ্বারা আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের স্থাপনা কিভাবে হয়। যখন আদি সনাতন দেবী-দেবতা ধর্ম ছিল, তখন অন্য আর কোনো ধর্ম ছিলো না। যারা যারা পবিত্র হতে পারবে, একমাত্র তারাই সেই পবিত্র দুনিয়ায় স্থান পাবে। তোমাদের মধ্যে যতো বেশী পরিমানে সেই শক্তি ভরতে থাকবে, ততোই তোমরা সারির প্রথমের দিকে আসবে। এই বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চে তোমরা সবাই তো আর একসঙ্গে আসবে না। আর তোমরা এটাও জানো যে সত্য এবং ত্রেতাযুগের প্রথমদিকে খুব অল্প-সংখ্যক দেবী-দেবতা থাকেন। যা পরের দিকে ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রজারা তো সংখ্যায় অনেক লোকই থাকবে। এ সব যারা বোঝাবে তাদের সে জ্ঞান খুব পরিষ্কার ভাবে বুদ্ধিতে থাকা দরকার। সবাইকেই বলো, বেহদের বাবার থেকে তোমরা এসে আশীর্ব্বাদের বর্ষা নিয়ে যাও। যাঁকে তোমরা বাবা বলে কাতর ভাবে ডাকতে থাকো- তাঁর আসল নাম হলো শিব। ঈশ্বর, প্রভু বা ভগবান বললে মানুষ কিন্তু সেভাবে বুঝতে পারবে না যে-ইনিই হলেন আমাদের সেই শিববাবা, যাঁর থেকে আমরা আশীর্ব্বাদের বর্ষা এবং সম্পত্তি প্রাপ্ত হই। শিববাবা বললেই তো আশীর্ব্বাদ আর বর্ষার কথা তোমাদের স্মরণে এসে যায়। শিববাবাকে বলা হয় এভাবে -শিব পরমাত্মায়ে নমঃ। পরমাত্মার নাম তোমরা অবশ্যই বলবে, নাম রূপ ছাড়া কিছুই হয় না। তাই- পরমাত্মার নাম শিব। কেবল শিবায় নমঃ, শুধুমাত্র এই কথা তোমরা বোলো না, শিব পরমাত্মায়ে নমঃ, এইভাবে তোমরা বলবে। প্রত্যেকটা কথা খুব সুন্দর এবং পরিষ্কার করে তোমাদের নিজেদেরকে আগে বুঝতে হবে। শিবায় নমঃ এই কথা বললে তিঁনি যে আমাদের একান্তই নিজের বাবা, সেই মজাটা কিন্তু অনুভূতি হয় না। মানুষ তো ভগবানের পরিচয়েও নিজের পরিচয় বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তোমরা তো জানো, মানুষ কখনো ভগবান হতে পারে না। ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শংকরকেও দেবতাই বলা হয়। (ভগবান নয়) যেহেতু রচয়িতা তো একজনই -তিঁনি বাবা আর তিঁনিও হলেন নিরাকার। যেমন লৌকিক বাবা সন্তানের জন্ম দেন, সন্তানকে নিজের সম্পত্তির অধিকারী করেন, ঠিক তেমনই বেহদের শিববাবাও তোমাদেরকেই পৃথিবীর সম্পত্তির অধিকারী করেন। ভারতকেই তিঁনি বিশ্বসেরা বানান। সারা দুনিয়াতে পতিত পাবন এই এক ও একমাত্র শিববাবাই। এইকথা তো বেশীরভাগ মানুষই জানেই না। বর্তমানের ধর্ম-স্থাপকরাও এখন পতিত, তমোপ্রধান হয়ে আছে। এখন সবারই অন্তিম সময় উপস্থিত। শিব বাবাই এসে সবাইকে পতিত থেকে পাবন তৈরী করেন। প্রতি কল্পের শেষ সময়েই খুদা বা ভগবান আসেন এই ধরাধামে। যিনি জ্ঞানের সাগর। এটাও কথিত আছে যে সাগরের বাচ্চারা কাম-চিতায় বসে কালো লোহার মতো হয়ে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল, তাই আবার কেমন করেই বা তারা সুন্দর হবে ? এ বিষয়ে বাবা বলেন, তার জন্য চাই স্মরণের যাত্রারযোগ। যোগ অক্ষর বললে মানুষ দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে যায় অর্থাৎ ঠিকঠাক বুঝতে পারে না। সেক্ষেত্রে বাবা বলেন যে, তোমরা কেবলমাত্র আমাকেই স্মরণ করো, তাহলেই "অন্ত মতি সো গতি " অর্থাৎ অন্তকালে তোমার যে ভাব হবে সেই গতিই তুমি প্রাপ্ত করবে। কত সহজ করে বাবা তার বাচ্চাদেরকে বোঝান, তবুও তোমাদের বুদ্ধিতে এই সরল কথাটাই কেন যে ধারণ হয় না ? দেহ অভিমান বেশী পরিমানে থাকার কারণে এই ধারণা ধারণ কটস সহজে হয় না। বাবা তোমাদের কত সুন্দর যুক্তি দিয়েই তো তা বলেন। বেহদের বাবা, যাকে তোমরা সবাই স্মরণ করো, তিঁনি স্বয়ং এসে কল্প-পূর্বে, এমন কি কি কাজ আর করেছিলেন ? তিনি এই ভারতকে স্বর্গ বানিয়েছিলেন। লৌকিক সম্পত্তি তো জন্ম জন্মান্তর ধরেই পেয়ে এসেছো। এখন বেহদের বাবার থেকে ২১ জন্মের জন্য সেই সব সম্পত্তির অধিকারী হও। সত্যযুগ আর ত্রেতাযুগে যেমন ভাবে দেবতারা রাজ্য করতো, সেভাবে। অর্থাৎ সূর্য-বংশী থেকে চন্দ্র-বংশী, তারপর বৈশ্য-বংশী থেকে শূদ্র-বংশী .........এর থেকেই বোঝা যায় প্রত্যেক আত্মা পুনর্জন্মতে আসে আর বিভিন্ন বর্ণেও আসে। বাবা তো সবাইকে বোঝান, কিন্তু যেহেতু তোমরা সেন্টারে এসে বাবার সামনে থাকো, তাই তোমাদের এতে খুশীর অনুভব হয়। কারোর কারোর ভাগ্যে অবশ্য তা থাকে না। তাই তারা সেই সেবাও করতে পারে না। সেবা করলেই তো তোমাদের নাম হবে। সবাই বলবে দ্যাখো, বাবার বাচ্চারা কতো হুঁশিয়ার, কেমন করে সুন্দরভাবে সমস্ত কাজই সমাধা করে। বাবাও তোমাদেরকে স্বর্গের বাদশাহীর আশীর্ব্বাদের বর্ষা দেন। সমস্ত জ্ঞান-রত্নই বাবা তোমাদেরকে দান করেন। এই যে ছবি যাতে দেখানো হয় অন্ধের আগে আয়না- .......এর মধ্যে কোনো জাদু নেই। পবিত্রতাই এখানকার মুখ্য বিষয়। এটাই তোমাদের অন্তিম জন্ম। তাই স্বর্গে যাবার জন্য তোমাদেরকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে। মহা-বিনাশ যে শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে। তাই অবশ্যই তোমাদেরকে এখনই পবিত্র হতে হবে। সন্ন্যাসীরা পবিত্র থাকার জন্য ঘর বাড়ি ছেড়ে সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ করে। বাবা বলেন, যেহেতু সামনেই এই মহা-বিনাশ তাই আমাকে স্মরণ করতে থাকো, তাহলেই তোমরা পার হয়ে যেতে পারবে।

    আচ্ছা ! মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি (সিকিলধে) বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, ,বাপ্দাদাকে স্মরণ ও ভালোবাসা, আর সুপ্রভাত। রুহানী বাবার রুহানী বাচ্চাদেরকে নমস্কার।

    ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

    ১) মহা-বিনাশের আগে নিজের যা কিছু সমস্ত কিছুকেই সফল করতে হবে। এখন অন্তিম সময় উপস্থিত, তাই অবশ্যই তোমাদেরকে পবিত্র হতে হবে।

    ২) কোনও দেহধারীদের প্রতি মোহ না রেখে, নিজেকে মোহজীত হতে হবে। দেহ অভিমানই হল প্রধান শত্রু। সুতরাং এর উপর তোমাদেরকে বিজয় পেতে হবে। আর তার জন্য অন্য সকলকে বাদ দিয়ে এক বাবার সঙ্গেই বুদ্ধির যোগে জুড়ে থাকতে হবে।

    বরদান :- 

    সদা উৎসাহ উদ্দীপনায় থেকে (চড়তি কলার) যোগের যাত্রায় এগিয়ে যাবার অনুভবকারী মহাবীর হও (ভবঃ) l

    ব্যাখ্যা :- মহাবীর বাচ্চারা প্রতি সেকেন্ডে, প্রতিটা সংকল্পে (চড়তি কলার) এগিয়ে থাকার অনুভব করে। তাদের চড়তি কলা তাদের সবার প্রতি কল্যাণের নিমিত্ত বানিয়ে দেয়। তাদের থেমে থাকার বা পরিশ্রান্ত হবার অনুভূতি হয় না। সর্বদা তারা অক্লান্ত থাকে এবং উৎসাহ আর উদ্দীপনার আনন্দে থাকে। যারা হটাৎ থেমে যায়, তাদেরকে ঘোড়-সাওয়ার, আর যারা ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত হয়, তাদেরকে পেয়াদা আর যারা সদা চলতে থাকে তাদেরকে মহাবীর বলা হয়। মায়ার কাছে তারা কোনো ভাবেই পরাস্ত হয় না।

    স্লোগান :- 

    শক্তিশালী সে হয়, যে নিজের সাধনার দ্বারা যখন খুশী শীতল-স্বরূপ আবার যখন খুশী জ্বালা-স্বরূপ ধারণ করতে পারে।


    ***OM SHANTI***