BK Murli 21 April 2016 Bengali

bk murli today

Posted by: BK Prerana

BK Prerana is executive editor at bkmurlis.net and covers daily updates from Brahma Kumaris Spiritual University. Prerana updates murlis in English and Hindi everyday.
Twitter: @bkprerana | Facebook: @bkkumarisprerana
Share:






    BK Murli 21 April 2016 Bengali

    ২১-০৪-২০১৬ প্রাতঃ মুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন

    " মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা- তোমরাই ঈশ্বরীয় সেবায় উদ্ধারকারী শিবসেনা। অন্য আত্মাদের সবাইকে তাই তোমাদেরকেই সদ্গতি করাতে হবে, আর যাতে তাদের সকলের ভালোবাসা ও সম্বন্ধ এক ও একমাত্র বাবার সঙ্গেই জুড়ে থাকে।"

    প্রশ্ন :- 

    দুনিয়ায় মানুষেরা তাদের বুদ্ধিকে কোন্ বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে আর তোমরাই বা তোমাদের বুদ্ধিকে কোন্ কাজে লাগাও ?

    উত্তর :- 

    মানুষ তো তাদের বুদ্ধি মহাকাশ গবেষণা, বা এই সৃষ্টির অন্ত কোথায় -তা জানার জন্য বুদ্ধিকে ব্যস্ত রাখে। কিন্তু এই বিষয়ে বুদ্ধি লাগালে তো তাতে কোনো উপকার হয় না l কারণ এর শেষ তো তারা খুঁজেই পাবে না l কিন্তু তোমরা বাচ্চারা তোমাদের বুদ্ধিকে সেই সব কাজে লাগাও - যার ফলে তোমরা নিজেদেরকে পূজ্য দেবতা স্বরূপ বানাতে পারো। অথচ অন্যরা সেখানে পূজ্য হতে পারে না। আর তোমরা বাচ্চারাই সেই পূজনীয় দেবতা হতে পারো l

    গীত :- 

    তুমহে পাকে হামনে, জাঁহা পা লিয়া হ্যায় - জমি তো জমিন, আসমান পা লিয়া হ্যায়.......
    ( হে প্রানেশ্বর, তোমাকে পেয়ে ধন্য আমি, তোমাতেই আমার সর্বপ্রাপ্তির অনুভব হয়েছে, এই দুনিয়াদারীর যা কিছু সে সব তো বটেই, এছাড়া পরমধামেও যে স্থান পেয়েছি।)


    ওম্ শান্তি! 

    বাচ্চারা তো অবগতই আছে যে , এই পাঠ হল জ্ঞানমার্গের আর অন্য পাঠ ভক্তিমার্গের। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে, ভক্তি মার্গ ভালো না জ্ঞানমার্গ ? দুটো দু'ধরনের হল না ? এ কথা তো প্রচলিতই আছে যে, জ্ঞানের দ্বারাই সদ্গতির প্রাপ্তি হয় l তাহলে তো অবশ্যই সবাই বলবে , ভক্তি আর জ্ঞান দুটো আলাদা আলাদা পদ্ধতি l সাধারণ মানুষ ভাবে যে ভক্তি করলে জ্ঞান বাড়বে আর তার দ্বারাই সদ্গতিও হবে l কিন্তু ভক্তির মধ্যে সে জ্ঞান আসতে পারে না l যদিও, ভক্তিও যেমন সকলের জন্য, জ্ঞানও তেমনি সকলের জন্য l এখন যেমন কলিযুগ, যার ফলে সমস্ত মানুষ এখন এত দুর্গতিতে আছে , তাই সমস্ত মানুষ ভগবানকে ডাকতে থাকে আর বলতে থাকে, অন্য সকলের সঙ্গে সম্বন্ধ-সম্পর্ক ছেড়ে এক তোমার সঙ্গেই সব সম্বন্ধ জুড়বো l এখন এই "তুমি" কে ? কার সঙ্গেই বা সম্বন্ধ জুড়বে ? এ কথা তো পরিষ্কার করে বুঝতে পারে না অনেকেই। তাই তো বেশিরভাগ সময় বুদ্ধি বা নজর কৃষ্ণের দিকেই চলে যায় l আমাদের সত্যিকারের ভালোবাসা এক তোমারই সাথে থাকবে। তাহলে কৃষ্ণের সঙ্গেই যখন সত্যিকারের ভালোবাসা তবে তো গুরু গোঁসাই-এর আর কোনো প্রয়োজনই নেই l সেক্ষেত্রে কেবল কৃষ্ণকেই স্মরণ করতে হবে l কৃষ্ণের ছবি তো সবার কাছেই আছে l মানুষেরা কৃষ্ণ-জয়ন্তী পালনও করে। তাহলে তো আর গুরুর কাছে যাওয়ার কোনো দরকার নেই l যেমন মীরা এক কৃষ্ণের সঙ্গেই সর্ব-সম্বন্ধ জুড়েছিলো l সমস্ত কাজকর্ম করার মধ্যেও কৃষ্ণকেই স্মরণ করতো l গৃহস্থ জীবনে থেকে খাওয়া-দাওয়া করেও সত্যিকারের ভালোবাসা এক কৃষ্ণের সঙ্গেই ছিল l যেমন মীরা (আশিক) প্রেমিকা আর কৃষ্ণ তার (মাশুক) প্রেমী হয়ে গিয়েছিল l কৃষ্ণকে স্মরণ করলেও তো ফল প্রাপ্ত করা যায় l যেখানে কৃষ্ণকে তো সবাই জানে l তাই তো তারা বলে থাকে, সত্যিকারের ভালোবাসা আমরা এক তোমার সঙ্গেই জুড়েছি অন্য সব সম্বন্ধ ছেড়ে। " এইরকম বহু গানও প্রচলিত আছে l কিন্তু উঁচুর থেকে উঁচু (সবার উপরে) সর্ব্বোচ্চ একমাত্র সত্যি তো এই পরমপিতাই l এই বাবাই সবাইকে ভাগ্যের আশীর্ব্বাদের বর্ষা (সম্পত্তি) দেন l কিন্তু, এই বাবাকে কেউ ঠিকভাবে জানতে পারে না l যদিও তারা বলে যে - পরমপিতা পরমাত্মা শিব, -কিন্তু তিনি কখন আসেন, কি তাঁর কর্তব্য তা বিশেষভাবে কেউ জানে না। শিব জয়ন্তী যখন হয় তখন শিববাবা নিশ্চয়ই আসেন l কিন্তু কখন আসেন, কিভাবে আসেন আর এসেই বা কি করেন ? এই সব খবর কেউই জানে না l দুনিয়ার কোনো মানুষই জানে না যে শিববাবাই সবার সদ্গতি করান l কিন্তু, সদ্গতি কেমনভাবে করান ? আর সদ্গতির অর্থই বা কি ? এইসব কিছু বুঝতেই পারে না l একদা এই শিববাবাই তো স্বর্গের রাজত্ব দিয়েছিলো- তাই না ? তোমরা বাচ্চারা যারা সেই দেবী দেবতা ধর্মের ছিলে, যদিও তোমাদেরই তা আর মনে নেই , তোমরাই ভুলে বসে আছো, তাহলে অন্যেরা আর কেমন করেই বা তা জানবে। এখন শিববাবার দ্বারাই তোমরা এই কথা জানতে পারছো আর অন্যকেও সে খবর শোনাচ্ছো। তোমারই এই ঈশ্বরীয় সেবায় আত্মাদের উদ্ধারকারী শিবসেনা l উদ্ধারকারী, বা মুক্তিদাতাই বলো আর সদ্গতিদাতা কিম্বা সেনাবাহিনীই যাই বলো । তোমাদের বাচ্চাদের কিন্তু এখন অনেক দায়িত্ব l তোমরা এখানকার এই সব ছবি দেখিয়েও মানুষকে বোঝাতে পারো l সারা ভারতে ভাষা তো বিভিন্নরকমের হয় l কিন্তু ভারতের প্রধান ভাষার উপরেই ছবি বানানোর প্রয়োজন হয় l ভাষার অনেক ঝঞ্ঝাট, তাই বিভিন্ন জায়গায় ছবির সাহায্যে প্রদর্শনী বানাতে হয় l ছবি দিয়ে বোঝানো খুবই সহজ। গোলার (সৃষ্টি-চক্র) ছবি দিয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞান বুঝানো যায় , তবে সিঁড়ির (৮৪- জন্মের কাহিনী) ছবি শুধু ভারতবাসীদের জন্য l যেহেতু, এই ছবির মধ্যে অন্য কোনো বিদেশী ধর্মের লোক আসতেই পারে না l এমন তো নয় যে কেবল ভারতবাসীরাই সতোপ্রধান থেকে তমোপ্রধান অবস্থায় আসে l তমোপ্রধান তো সমস্ত মানুষরাই হতে থাকে l সুতরাং সবাইকেই এই ছবি দিয়ে বোঝানো যায় l তাই বুদ্ধিতে এই ধরনের সেবা-কাজের খেয়াল যেন সবসময় থাকে l দুজনে মিলে বাবার নানা রহস্যকেও বোঝানো চাই l এই বর্ষা বা সম্পত্তি একমাত্র শিববাবার থেকেই মেলে l যদিও এই কথা সমস্ত ধর্মের লোকই তা জানে যে, লক্ষ্মী-নারায়ণই ভারতের সবার প্রথম রাজা-রাণী ছিলেন বা ভগবান-ভগবতী ছিলেন l আচ্ছা, এই স্বর্গের রাজত্ব এনারা কেমন করে তা পেয়েছিলেন ? নিশ্চয় তা ভগবানের দ্বারাই পেয়েছিলেন l কিন্তু তা কেমন ভাবে পেলেন, কবে পেলেন, এইসব কিন্তু কেউই জানে না l মানুষেরাই কৃষ্ণকে গীতার ভগবান বানিয়ে দিয়েছে , তারপর গীতাতে আবার প্রলয়ও দেখানো হয়েছে l কিন্তু তাতে তো কোনো ফলই পাওয়া যায় নি l এইসব কথা তোমরা বাচ্চারাই মানুষকে বোঝাবে। বোঝানোর জন্য সবধরনের ছবিই তো আছে। লক্ষ্মী-নারায়ণের অনেক প্রকারের ছবিই আছে, যেখানে সুন্দর পোশাক পরিচ্ছদ পরা এবং অন্য ধরনেরও আরও অনেক ছবি আছে l যে যেমন ছবি বানাতে পারে, সে তেমনই বানিয়েছে l শ্রীনাথ-শ্রীনাথিনী, এ তো রাধা কৃষ্ণেরই আরেক নাম l শ্রীরাধা-শ্রীকৃষ্ণ তো মুকুটধারী হতে পারেন না l ওনাদের গায়ের রং-ও কালো হয় না l রাজধানী কার হয়, লক্ষ্মী-নারায়ণের নাকি রাধা-কৃষ্ণের ? মন্দির তো অনেক ধরনেরই বানানো হয়েছে l সবগুলিরই নাম তো একটাই রাখা উচিত, লক্ষ্মী-নারায়ণের মন্দিরl যেহেতু লক্ষ্মী-নারায়ণের সম্রাজ্যই বলা হয় l রাম - সীতার ঘরানা (বংশ), লক্ষ্মী-নারায়ণের ঘরানা (বংশ) এমন ভাবেই বলা হয়। কিন্তু রাধা-কৃষ্ণের ঘরানা বলা হয় না l এইসব কথা আজ আর মানুষের স্মরণেই নেই l তোমরা বাচ্চারাও পুরুষার্থের ক্রমানুসারে অর্থাৎ যে যেমন পুরুষার্থ করছো তার হিসাবেই এই জ্ঞান অর্জন করতে পারো l যে সব বাচ্চাদের সেবার কাজে খুব উৎসাহ আছে - তারা তো এই কাজ করার জন্য ছট্ফট্ করতে থাকে l কোনো কোনো বাচ্চারা বলে আমরা এই জ্ঞান ভালো করে বুঝতে পারছি না, তাই অন্যকেও সেভাবে বোঝাতে পারছি না l তাদেরও অন্যকে বোঝানোর জন্য ধীরে ধীরে মুখ খোলার অভ্যাস তৈরী করতে হবে l আবার অনেকে ভাবে বেদ শাস্ত্র অধ্যয়ন করলে, যজ্ঞ, তপস্যা ইত্যাদি করলে অথবা তীর্থ যাত্রা করলেও পরমাত্মাকে পাওয়া সম্ভব হয়l কিন্তু ভগবান স্বয়ং বলেন, এইসব হলো আমার থেকে দূরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। নাটকের নিয়ম অনুসারে মানুষ এইধরনের দুর্গতি পাবে, তাই এইসব চিন্তা ভাবনা অনেক কাল ধরেই চলে আসছে l আগে মানুষ বলতো ধর্মের যে কোনো পথে যাও না কেন ভগবানকে পাওয়া যাবে। তাই মানুষও ঈশ্বরকে পাওয়ার অনেক ধরনের পথই অবলম্বন করতো l এতদিন ভক্তিমার্গের পথ অবলম্বন করে ভগবানকে না পেয়ে তারা যখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলে, ঠিক তখনই তাঁকে (বাবাকে) ডাকতে থাকে, হে পতিত পাবন তুমি এসে আমাদের পবিত্র হওয়ার রাস্তা বলোl আমরা পরিশ্রান্ত, তোমাকে ছাড়া আমরা পবিত্র হতে পারবো নাl ভক্তি করতে করতে মানুষ ভগবানকে না পেয়ে তখন ধৈর্য হারিয়ে ফেলে l এখন তো বিভিন্ন মেলায় লাখ লাখ লোক একত্রিত হয় যে কারণে পরিবেশও দূষিত হয়ে ওঠে l কারণ এখন বিনাশের অন্তিম সময় চলছে l তাই এই দুনিয়ার পরিবর্তনের প্রয়োজন l আসলে দুনিয়া তো একটাই l তাকেই দু'ভাগে ভাগ করে বোঝানো হয়েছে। তাই তো মানুষ ভাবে যে স্বর্গ আর নরক আলাদা আলাদা জায়গায় আছে l কিন্তু সেই ভাবনা অবশ্যই ভুল l এই পৃথিবীতেই স্বর্গ আর নরককে দুই যুগ করে ভাগ করে বোঝানো আছে l অর্থাৎ দুই যুগ স্বর্গ আর দুই যুগ হলো নরক l উপরে সত্যযুগ আর ত্রেতাযুগ, তারপর নিচের দিকে দ্বাপর আর কলিযুগl তাই কলিযুগকেই তো তমোপ্রধান হতে হবে l অথচ এই সৃষ্টি যে পুরানো হয়, এই কথা কেউ কিন্তু বুঝতেই পারে না l যেহেতু অজ্ঞান নিদ্রায় সবাই এখন ঘুমিয়ে আছে l তাই কেউ কৃষ্ণকে ভগবান বলে তো কেউ আবার রামকে ভগবান বলে l আজকাল তো মানুষ আবার নিজেদেরই ভগবান বলে। তারা বলে আমি ঈশ্বরের অবতার l দেবতাদের থেকেও মানুষের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয়ে গেছে l দেবতারা তো তবু নিজেদের দেবতা বলে। আর এখানে তো মানুষই অন্য মানুষকে ভগবান প্রতিপন্ন করে l এই সকলই হলো ভক্তিমার্গের লক্ষণ l দেবতারা তো তবু স্বর্গ-রাজ্যে বিরাজ করতো l কিন্তু এই কলিযুগে (লৌহ যুগে) মানুষ কি করে ভগবান হতে পারে l বাবা বলেন যে, আমি কেবল এই সঙ্গম যুগেই আসি। কেননা আমাকেই এসে এই দুনিয়ার পরিবর্তন করতে হয় l তোমরা সবাই কলিযুগ থেকে সত্য যুগে যাবে আর বাদবাকী সবাই শান্তিধামে চলে যাবে l শান্তিধাম হলো নিরাকারী দুনিয়া l আর এটা হলো সাকারী দুনিয়া l নিরাকারী ঝাড়কেও (বৃক্ষ) বোঝানোর জন্য অনেক বড় ছবি বানাতে হয় l আকাশ যতখানি বড়, ব্রহ্ম মহতত্বও ঠিক ততখানি বড়। এই দুইয়েরই তলাতল তোমরা খুঁজেও পাবে না l এত অনেক তো চেষ্টা তোমরা করো- এরোপ্লেনে করেও উড়ে-ঘুরে এর রহস্যকে জানার। শুধু চেষ্টাই করো কিন্তু এর অন্ত বা শেষ তোমরা কখনোই খুঁজে পাবে না l পৃথিবীটা তো চারিদিকে সমুদ্র আর আকাশ কিন্তু এর বাইরের দুনিয়ায়, ওখানে তো কিছুই নেই l তোমরা যতই অনেক চেষ্টা কর না কেন,- কিন্তু এইসব চেষ্টা করে তাতে আর কোনো লাভ নেই l তোমরা মনে করো যে তোমরা তোমাদের বুদ্ধিকে কতই না প্রয়োগ করছো l কিন্তু, তাতে আর কি বা হবে- এ তো মানুষের বুদ্ধি, তাই সায়েন্সের (বিজ্ঞানের) অহংকার তো মানুষের মধ্যেই এত l যতই সায়েন্সের দ্বারা মানুষ অনেক কিছু জানার চেষ্টা করুক না কেন, তাতে কিন্তু সারা দুনিয়া এদের পুজো করবে না l যেহেতু একমাত্র দেবতাদেরই তো পুজো হয়ে থাকে l বাবা তোমাদের বাচ্চাদেরকে সেইসব গুণে সমৃদ্ধ করে কতো উচ্চ পর্যায়ের বানিয়ে দেন। তারপর সাথে করে সবাইকে শান্তিধামে নিয়ে যায় l যদিও তোমরা বাচ্চারা জানো যে তোমরা মূলবতন থেকে এখানে আসো অভিনয়ের কর্ম-কর্তব্য করার জন্যে, কিন্তু তা যেমনভাবে তোমরা জানো, ঠিক তেমনভাবে দুনিয়ার অন্য লোকেরা তা জানতে পারে না l যেমন, মূলবতন কি, সেখানে আত্মারা কেমনভাবে থাকে, তারপর কর্মের হিসাব অনুসারে একের পর এক কিভাবে এই পৃথিবীতে আসে তাদের কর্ম-কর্তব্যের অভিনয় করার জন্য- এইসব তো সঠিক কেউই জানে না l ব্রহ্ম-মহাতত্বে অর্থাৎ মূলবতনে বা পরমধামে নিরাকারী ঝাড় (সৃষ্টিরূপী কল্প-বৃক্ষ) আছে। যার থেকে সত্যযুগে খুব সামান্য সংখ্যক আত্মাই এই পৃথিবীতে থাকবে, এই কথা যা তোমরা ছাড়া আর অন্য কেউ বুঝতে পারে না। বাকি অন্যান্য আত্মারা তখন মূলবতনেই থাকবেl যেমন এখানে সাকারী বতন মানুষের ঝাড়, তেমনি মূলবতনে নিরাকারী আত্মাদের ঝাড় l বতন কখনোই সম্পূর্ণভাবে খালি হয় না, না এখানে-না ওখানে l যখন শেষ সময় উপস্থিত হবে তখন এই দুনিয়ারও পরিবর্তন হয়ে যাবে l কিছু মানুষ তো এখানে থেকেই যাবে, সবাই যদি চলে যায় তবে তো প্রলয় হয়ে যাবে l কিন্তু সেই প্রলয় তো আর হয় না, যেহেতু এটা তো একটা অবিনাশী খণ্ডl এইসকল কথা যক্তি-বুদ্ধি দিয়ে বোঝা দরকার l আমরা যেন সকলের কল্যাণই করতে পারি, সারাদিন এই খেয়ালই যেন মাথায় থাকে। বাবার সঙ্গে যখন মনের সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে, তখন বাবার পরিচয় তো অন্যদের সকলকে দিতেই হবে। যেখানে ইঁনি হলেন আমাদের সকলের বাবা পরমপিতা পরমাত্মা শিববাবাl এনার থেকেই আশীর্বাদের বর্ষা বা সম্পত্তি পাওয়া যায় l কেমন করে পেতে পারো সে কথা কেবল আমরাই তোমাদের বুঝিয়ে বলতে পারি,- অন্যদেরকে, এইভাবেই বুঝিয়ে বলতে হবে l যারা অন্য মানুষদেরকে বাবার এই জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে বলবে তাদের মধ্যেও কিন্তু এক নম্বর, দু নম্বর হিসাবে আছেl যেমন কেউ কেউ খুব ভালোভাবে ভাষণ করে বোঝাতে পারে, আবার কেউ কেউ অতটা ভালো পারে না, যারা তা পারে না, তাদেরকেও কিন্তু ভালোভাবে তা শিখতে হবেl অর্থাৎ প্রত্যেক বাচ্চাকে আগে তাদের নিজেদের কল্যাণ করতে হবেl যখন মানুষের কল্যাণের এতো সুন্দর পথ পাওয়া গেছে, তখন একজনকে অপরজনের কল্যাণ অবশ্যই করতে হবে। সবসময় যেন মনে থাকে, সবাইকেই যেন বাবার এই সদ্গুণের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বানাতে পারি l সবসময় ঈশ্বরীয় আদেশ পালন করতে থাকবে। সবাই একে-অপরকে সেবার ভাব যেন থাকে l যেখানে বাবা স্বয়ং এসেই এই আত্মিক সেবা শেখাচ্ছেন l যা আর কেউই এই আত্মিক সেবা সম্বন্ধে কিছু ধারণাই রাখে না l আত্মার বাবা পরমাত্মা স্বয়ং নিজে এসেই আত্মাদেরকে এই সেবা করেন l শরীরের সেবা তো বহু জন্ম জন্মান্তরে করে এসেছো l এখন এই অন্তিম জন্মে আত্মার সেবা করো, যা বাবা এসে স্বয়ং তোমাদেরকে শেখাচ্ছেন l আর এতেই সকলের কল্যাণ হবে, যা আর অন্য কিছুতেই কোনো লাভ হয় না l যদিও গৃহস্থ ব্যবহারেই তোমাদের থাকতে হবে, কিন্তু আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে শারীরিক যে কোনো সম্বন্ধকে ছিন্ন করে আত্মিক ভালোবাসার ধর্মকে অবশ্যই পালন করতে হবেl তাদেরও এই কথা সেভাবে বুঝিয়ে মঙ্গল করাতে হবে l যদি শিববাবার উপর ভালোবাসা থাকে তবে কিছু তো তারা শুনবেই l কেউ কেউ তো আবার ভয় পেয়েও যায়, তারা ভাবে, কি জানি আমাদের না আবার সন্ন্যাসীর জীবন ধারণ করতে হয় l বর্তমান জগতে তো কত প্রকারেরই সন্ন্যাসী, তাও আবার সংখ্যাতেও অনেক, - তাই না l তাঁরা অনেকেই কৌপীন (মুখ ঢেকে) পরেন আর অল্প কিছু জ্ঞানের কথা শোনান l ভক্তজনেরা তাতেই আবার তাদেরকে- খাবারও শ্রদ্ধা সহকারে খাইয়ে দেন l সন্ন্যাসীলোকেরাও এখানে ওখানে ঘুরেও বেড়ান। কোনও দোকানে গেল, দোকানদার তাকে দুটো লুচি দিয়ে দিল। আবার অন্যত্র কোথাও- এ ভাবেই তারা তাদের খাবারের সংস্থান করে থাকে। এও তো এক প্রকারের ভিক্ষাবৃত্তিই হলো। কিন্তু শিববাবার থেকে তো এই জ্ঞানের বর্ষা (সুখ, শান্তি, প্রেম, আনন্দ, পবিত্রতা) পাওয়া যায় l তোমরা স্বর্গের রাজত্বও শিববাবার থেকেই পাও। আবার সদা নীরোগী জীবনও তাঁর থেকেই পাও l সাহুকার (ধনী- সম্পদশালীরা) লোকজন খুব সহজে এই জ্ঞান ধারণ করতে পারে না কারণ তারা অর্থের মোহে অহংকারী হয়ে থাকে l তোমাদের তো গরীব মানুষেরও কল্যাণ করতে হবে l বাবা তোমাদের দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনী করান, গ্রামে-গঞ্জেও অনেক মানুষজন থাকে, তাদেরকেও এই জ্ঞান প্রাপ্ত করতে হবেl আবার মন্ত্রী আমলারা এই জ্ঞান শুনলে এর প্রশংসা করবে, তখন তাদের কথা শুনে অন্য সকলে এই জ্ঞান শুনতে আসবে l হ্যাঁ, অদূর ভবিষ্যতে, তোমাদের নাম সকলে জানতে পারবে, তখন অনেকেই তোমাদের কাছে এই জ্ঞান শুনতে আসবেl আত্মার ময়লাকে পরিস্কার (শুদ্ধ) করতে তো কিছুটা সময় লাগেl রাত দিন যখন এই জ্ঞান শুনে তাকে জীবনে ব্যবহার করো, তখনই এই ময়লা আস্তে আস্তে বের হতে পারে। এইভাবে যখন আত্মা সম্পূর্ণ শুদ্ধ হয়ে যাবে, তখনই আত্মার শরীর ত্যাগ করার প্রয়োজন হবে। এগুলোই বুদ্ধি ও যুক্তি সহকারে বোঝার কথা। প্রদর্শনী করেও তোমরা সকলকে এই কথা বোঝাও। মুখ্য কথাই হলো সারা ভারতেই এর প্রচার। যেহেতু, ভারতের উত্থান হলেই সারা পৃথিবীরই উত্থান হবেl প্রদর্শনীতে বড় বড় প্রজেক্টার লাগিয়েও তোমরা এই সেবা করতে পারোl আস্তে আস্তে এই জ্ঞানের আগ্রহে, এখানে অনেক মানুষের বৃদ্ধি হতে থাকবে l দিন- প্রতিদিন তোমাদের নামও বাড়তে থাকবে। তোমরা এমন কথাও লিখবে যে পাঁচ হাজার বছর আগেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। যা লোকে শুনে বলবে,- এটা তো খুব চমৎকারী কথা। বাবা এ সবকিছুরই ইঙ্গিত দেন, তবুও বাচ্চারা অনেকেই অনেকে কথাই ভুলে যায় l যদি কোনো ঘটনা ঘটে তাহলে তোমরা সকলকে বলবে যে পাঁচ হাজার বছর আগেও এই ঘটনা ঘটেছিলো। এটা তো খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট কথা। এই কথা সহজে যদি তাতে কারোর বুদ্ধিতে ঢোকে তবেই তা পরিষ্কার বুঝবে। তোমরা খবরের কাগজেও বিজ্ঞাপন দিতে পারো, তাহলেও কিছু মানুষকে তা বোঝানো সহজ হবে l জ্ঞানমার্গে থাকলে জ্ঞানের তীক্ষ্ণতা হওয়া চাই l যেহেতু তোমাদের তা জানা, এইসব কথা মনে করে তোমরা সবসময় প্রফুল্ল থাকবেl এই জ্ঞান যদি তোমরা জীবনে অভ্যাস করো তাহলে খুশীর মেজাজেই থাকতে পারবে l আচ্ছা l

    মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি (সিকিলধে) বাচ্চাদের প্রতি মাতা-পিতা, বাপ দাদার স্মরণ, ভালোবাসা আর সুপ্রভাত।। রূহানী বাবার রূহানী বাচ্চাদের প্রতি নমস্কার।

    ধারণার জন্য মুখ্য সার :- 

    ১) দুনিয়ার মানুষের সঙ্গে মন ও বুদ্ধির সংযোগ না রেখে, এক বাবার সঙ্গেই বুদ্ধির সম্পর্ক জুড়তে হবে, আর প্রত্যেকটি মানুষের সম্পর্ক এক বাবার সঙ্গে জুড়ে দেবার সেবাও করতে হবে l

    ২) তোমাদেরকে সত্যিকারের রূহানী সেবাধারী হতে হবে l নিজের কল্যাণ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যকেও কল্যাণের পথ দেখাতে হবে। সব সময় খুশীর মেজাজে থাকতে হবে অর্থাৎ সদা আনন্দময় স্থিতি বানাতে হবে l

    বরদান :- 

    "জ্ঞানী তু আত্মা" হয়ে জ্ঞান সাগরের জ্ঞানে ডুব দিয়ে সর্ব প্রাপ্তি স্বরূপ ভব ( হও ) l 

    "জ্ঞানী তু আত্মা" -সেই হতে পারে যে সবসময় জ্ঞান সাগরে ডুব দিয়ে জ্ঞান রস পান করতে থাকে। আর তাতেই সর্ব-প্রাপ্তি স্বরূপ হওয়ার কারণে "ইচ্ছা মাত্রম্ অবিদ্যার" স্থিতি অর্থাৎ লৌকিক কামনা বাসনায় অনীহা সব সময় বজায় থাকে l কিন্তু তাতে সামান্যতম পূর্ব সংস্কারও যদি থাকে, তবে সে নাম, মান-সম্মানের চাহিদাতেই থাকবে l আর যারা সব কথাতেই কি, কেন ? এই প্রশ্ন করতে থাকে, ভিতরে এক আর বাইরে আর এক এই স্থিতি যাদের -- তাদের অবশ্য "জ্ঞানী তু আত্মা বলা যাবে না।"

    স্লোগান :- 

    সহজযোগী সেই হয়, যে এই জীবনে অতিন্দ্রীয় সুখ এবং আনন্দের অনুভূতি করতে পারেl



    ***OM SHANTI***