BK Murli 7 April 2016 In Bengali

bk murli today

Posted by: BK Prerana

BK Prerana is executive editor at bkmurlis.net and covers daily updates from Brahma Kumaris Spiritual University. Prerana updates murlis in English and Hindi everyday.
Twitter: @bkprerana | Facebook: @bkkumarisprerana
Share:






    BK Murli 7 April 2016 In Bengali

     ০৭-০৪-২০১৬ প্রাতঃ মুরলী ওঁম্ শান্তি! "বাপদাদা" মধুবন


    "মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চারা - বাবার কাছে যা (বক্খর) জ্ঞান-রত্নের অগাধ সম্ভার আছে, পরিশেষে তা সম্পূর্ণটাই তোমরা পাবে। অতএব তোমরা তা ধারণ করো আর অন্যদেরকেও তা ধারণ করার ধারণা যোগাও"

    প্রশ্ন :- 

    ত্রিকালদর্শী বাবা এই অবিনাশী নাটকের আদি-মধ্য-অন্তকে জানা সত্ত্বেও, আগামীতে যা হতে যাচ্ছে- বর্তমান সময়কালে তার কিছুই প্রকাশ করেন না - কিন্তু, উনি কেন তা করেন না ?

    উত্তর :- 

    বাবা জানাচ্ছেন- বাচ্চারা, পূর্বেই যদি তা জানিয়ে দিই, তবে তো নাটকের আর মজাই থাকে না। সেটা নিয়ম বিরুদ্ধ। যদিও এর সব কিছুই আমার জ্ঞাত - কিন্তু নাটকের চিত্রপট অনুযায়ী আমিও নিয়মের অধীন। তাই তো ঘটনার পূর্বে, তা প্রকাশ করা উচিত নয়। অতএব, ভবিষ্যতে কি হবে, সেই চিন্তা ত্যাগ করো।

    গীত :- 

    মরনা তেরী গলী মেঁ - জীনা তেরী গলী মেঁ।


    ( মরণ যদি হয় তো তোমার স্মরণেই তা হোক- আর বাঁচতে যদি হয় তো, তোমার স্মরণেই যেন বাঁচি।
    ওঁম্ শান্তি! ইনি (পরম্আত্মা) পারলৌকিক আত্মাদের বাবা। তাই তো উনি কেবল আত্মাদেরকেই বলে থাকেন। আর আত্মাদেরকে বাচ্চা-বাচ্চা বলে সম্বোধন করার অভ্যাস ওনার। এই আত্মাই যখন কোনও নারীর শরীরে অবস্থান করে, তখন শরীর নারীরূপ- প্রকৃত অর্থে আত্মা কিন্তু নারী বা পুরুষ হয় না। তাই শুধুমাত্র পরিচিতি হিসাবে বলা হয়- আত্মা পুরুষাকার। সব আত্মাই এক ও একমাত্র বাবার অধিকারী বাচ্চা। অর্থাৎ আশীর্ব্বাদের বর্সার অধিকারী। বাবা নিজেই তা জানান, প্রতি এক বাচ্চারই সেই অধিকার প্রাপ্য। কিন্তু, তার জন্য প্রয়োজন বাবাকে স্মরণে রাখা। যদিও এতে পরিশ্রম তো আছে। কিন্তু বাবাও যে এতদূর পরমধাম থেকে এসেছেন, -আত্মাদেরকে সেই পাঠ পড়াতে। সাধু-সন্তরা তো এই দুনিয়ার তাদের বাড়ী থেকে আসে মাত্র। কিম্বা কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা থেকে আসে। অথচ এই বাবা তো আসেন সেই পরমধাম থেকে, -তার বাচ্চাদেরকে পড়াতে। যা এই দুনিয়ার অন্যদের সেই ধারণাই নেই। বেহদের বাবা যিনি -তিনিই পতিত-পাবন ঈশ্বরীয় পিতা। ওনাকেই জ্ঞানের সাগর বলা হয়। যেহেতু উনিই সর্ব্বোচ্চ। কিন্তু, কোন্ বিশেষ জ্ঞানের সাগর ইনি ? -- যা হল ঈশ্বরীয় জ্ঞান। ইনিই সেই বাবা, যিনি মনুষ্য সৃষ্টির বীজ-রূপ, বা সৎ-চিৎ-আনন্দ স্বরূপ। তাই তো ওনার এত বিশাল গুণের মহিমা। ওনার কাছেই সেই জ্ঞান রত্নের অগাধ সম্পত্তি আছে। যেমন- কারও যদি দোকান থাকে, সে তার দোকানের সামগ্রীর বিভিন্নতা ও গুণ বর্ণনা করতে থাকে, বাবাও সেভাবেই জানান -উনিই জ্ঞানের সাগর, আনন্দের সাগর, শান্তির সাগর, ইত্যাদি। ওনার কাছে এই সব সম্পত্তি থাকে অফুরন্ত। যা বিলোবার জন্য, উনি এই সঙ্গমযুগেই আসেন, যে যতটা পরিমানে তা নিতে চায়, বা ধারণ করতে পারে, তা তারা নিতে পারে- তাদের পুরুষার্থ অনুসারে। বাচ্চারাও তা খুব ভালোভাবেই জানে, বাবার কাছে এমন কি কি রত্ন-সম্ভার আছে। আজকাল তো কেউ কারও ভালোটা বা পরিণতির কথা জানায় না। তাই তো কথিত আছে- যার ভবিষ্যৎ অন্ধকার, সেটা তার ব্যাপার। আমার তাতে কি ? যা আজকালের লোকেদের স্বভাব-চরিত্র আর কি। কিন্তু, আগুনে যখন সমস্ত জগৎই জ্বলবে, তখন তো বর্তমানের এই সব কিছুই শেষ হয়ে যাবে। যদিও রাজাদের প্রাসাদের ভিতরে মজবুত ভাবে তৈরী করা গুহাও ইত্যাদি থাকে। যদিও ভূমিকম্প বা ভীষণ অগ্নিকান্ডও ঘটে, তবুও তা থেকে তাদের বাঁচার উপায় থাকে। তোমরা বাচ্চারা তো এখন জানতেই পেরেছো, বর্তমান দুনিয়ার কোনও কিছুই নতুন দুনিয়ার কোনও কাজেই লাগবে না। খনি ইত্যাদিও সব নতুন রূপে পরিপূর্ণ হবে। বিজ্ঞানও তখন তোমাদের সেবায় আসবে অতি সূক্ষ্মরূপে। এই সব বিশেষ জ্ঞান তোমাদের বুদ্ধিতে তো অবশ্যই আছে। বাচ্চারা, -তোমরা তো জানো, আমিই এই সৃষ্টির আদি-মধ্য-অন্তকে জানি। সেই অন্তিম সময়ের আর সামান্য অংশই বাকী আছে মাত্র। অতি শীঘ্রই তারও প্রকাশ ও প্রভাব ঘটতে চলেছে। যা বাবা আগে-ভাগেই তা কি হিসাবে বলে দেবেন ? বাবা তো তা নানা ঈশারায় জানিয়ে দিয়েছেন, যেহেতু উনিও তো এই বিশ্ব-নাটকের চিত্রপটের অধীন। যে জ্ঞান এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তা সবই ঘটেছে এই নাটকের চিত্রপটে যতটুকু খোদিত আছে, -সেই অনুসারেই। এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে -প্রতি এক একটি মূহুর্তই অতিবাহিত হচ্ছে, ঠিক নাটকের চিত্রপট যে রকম সেই অনুসারেই। এরপর যে পরিস্থিতি আসবে, তাকেও সে ভাবেই সামলাতে হবে। তাই আগামীর ঘটনাকে বর্তমানে শোনানো উচিত হবে না। নাটকের এই রহস্যটাকেই মানুষ বুঝতে পারে না, কারণ তা বুঝতে চায় না বলে। তাই তো কল্পের আয়ুকে তারা কত বেশী লম্বা-চওড়া করে বর্ণনা করে। এই নাটককে বুঝতে হলে তার জন্য জ্ঞান- বুদ্ধি ও সাহসের প্রয়োজন। যেমন মা মারা গেলেও হালুয়া খাওয়া বন্ধ করা উচিত নয়............., বোধে সে রকমই রাখা উচিত, মারা গেছে যখন- তারপর তো সেই আত্মা পরবর্তী জন্ম অবশ্যই নেবে। এর জন্য কান্নাকাটি করে আর কি বা হবে। বাবা বাচ্চাদেরকে এভাবে বোঝাচ্ছেন - খবরের কাগজে এইভাবে বিজ্ঞাপণ দেওয়া যেতে পারে- "এই ধরনের প্রদর্শনী বা মেলা আজ থেকে ৫ হাজার বর্ষ পূর্বেও ঠিক এই এজ একই তারিখে, একই সময়ে, একই স্থানে, একই রীতিতে তা ঘটেছিল। যা হুবহু সব একই ঘটছে।" যেহেতু এটা বিশ্ব-জগতের ইতিহাস-ভূগোল। তা চক্রাকারে প্রতিনিয়ত তার সঠিক নিয়মে ঘুরতেই থাকে, আর সব কিছুরই পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। আর এটাও লেখা উচিত, এটা তো নিশ্চিত যে, এই দুনিয়ার পরিবর্তন হতে আর খুব অল্প সময়ই বাকী আছে। এখনকার যা কিছু আছে- তা সবকিছুই বিনাশ প্রাপ্ত হবে। কিন্তু আমরা (এই জ্ঞানের) পুরুষার্থের গুণে বিকর্মজীৎ হতে পারবো। তারপরে - দ্বাপর যুগ থেকে বিক্রম বর্ষকাল শুরু হয়। অর্থাৎ বিকর্মের সময়কাল। (যেই কর্মের দ্বারা পাপ-কর্ম হয় না) তোমরা বাচ্চারা যেহেতু এই বিকর্মকেও জয় করতে পারবে, তাই তো তোমরাও বিকর্মজীত হয়ে যাও। শ্রীমতে চলে পাপ-কর্মের উপর বিজয় প্রাপ্ত করতে পারলেই, বিকর্মাজীৎ হওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে আগে নিজেকে আত্ম-অভিমানী হতে হয়। যেখানে দেহ-অভিমান ভাব থাকে না। কিন্তু এই কলিযুগ তো দেহ-অভিমানের যুগ। এর সঙ্গমযুগ সময়ে তোমরা বাচ্চারাই দেহী-অভিমানী ভাবে আসতে পারো। যা অতি শুদ্ধ অভিমান অবস্থা। তাই তো পরমপিতা পরৃাত্মাকেও তোমরাই জানতে পারো। তোমরা ব্রাহ্মণরাই সর্বক্ষেত্রেই সর্ব্বোচ্চ ও উৎকৃষ্ট। তোমরাই সর্ব্বোত্তম ব্রাহ্মণ কুলের ধারক ও বাহক। এই জ্ঞাণ কেবলমাত্র তোমরাই নিতে জানো, যা অন্যেরা তা পায়ও না। যেহেতু তোমরা সর্ব্বোত্তম কুলের। এ তো কথিতই আছে -অতিন্দ্রিয় সুখ কাকে বলে তা জানতে হলে, গোপী-বল্লভ-এর বাচ্চাদের থেকে জানো। এই জ্ঞান প্রাপ্তির লটারী এখন তোমরা পেয়েছো। অন্য কোনও মূল্যবান বস্তু প্রাপ্তিতেও, সেই খুশী পাওয়া যায় না। ঠিক যেমন, নিতান্ত গরীব অবস্থা থেকে বিশাল ধনী অবস্থায় পৌঁছলে যে আনন্দ অনুভূতি হয়- অনেকটা তেমনই। তোমাদের এই ধারনা তো হয়েই আছে, যে যত বেশী পুরুষার্থ করতে পারে, সে তত বেশী পরিমানের রাজত্বের অধিকারী হয়। পুরুষার্থের অনুসারে প্রাপ্তির পরিমান। সার হিসেবে বাবা জানিয়েই দিয়েছেন, বাচ্চারা, তোমরা তোমাদের অতি প্রিয় বাবাকে আন্তরিক ভাবে স্মরণ করার সাথে সাথে জাগতিক কর্ম-কর্তব্যও পালন করবে। উনি সবারই অতি প্রিয় একমাত্র বাবা। যিনি এসে আমাদেরকে এত সুখ-শান্তি প্রদান করেন। বর্তমান সময়কালে দেবী-দেবতাদের জন্য রাজধানী তৈরীর প্রস্তুতি পর্ব চলছে। যেখানে সেই সময় রাজা-রাণীর উপস্থিতি যদিও থাকে না। সত্যযুগের স্বর্গে থাকেন মহারাজা-মহারাণীরা। আর যদি ওনাদেরকেই ভগবান-ভগবতী বলা যায়- তবে তো এরকমই দাঁড়ায়- যেমন অবস্থা রাজা-রাণীর, তেমন অবস্থাই প্রজাদেরও। তখন সবাই ভগবান-ভগবতীর গুণে গুণান্বিত একই পর্যায়ে থাকার দরুণ, তাদেরকে আর তা বলা হয় না। যেহেতু ভগবান তো একমাত্র একজনই। মনুষ্যদের তো আর ভগবান বলা যায় না। সূক্ষ্মবতনের অধিবাসী ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শংকরকেও তো দেবতা বলা হয়। স্থূলবতন-বাসীদেরকে আমরা কি ভাবেই বা ভগবান-ভগবতী বলতে পারি ? কোথায় সর্ব্বোচ্চ মূলবতন আর কোথায় সূক্ষ্মবতন, আর বর্তমানের এই দুনিয়াটা তো একেবারেই নিম্ন স্তরের। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, নিজের বুদ্ধিতে রাখতে হবে অবশ্যই। আমরা সব আত্মাদের একজনই বাবা-শিববাবা। উনি একাধারে যেমন শিক্ষক, অপরদিকে তিনি আবার গুরু-ও। তিনিই আবার স্বর্ণকার স্যঁকরা আবার তিনিই ব্যারিস্টার ইত্যাদি সর্বরূপ। তিনিই আবার সবাইকে রাবণের কবল থেকে মুক্ত করেন। তাই তো শিববাবাই সর্ব্বোচ্চ ব্যারিস্টার। এত উপকারী বাবাকে কি কোনও ভাবেই ভোলা যায় ? তারপরেও বাচ্চারা কিভাবে যে বলে, বাবা আমরা তা ভুলে যাই যে। যেহেতু মায়ার ভীষণ তুফানে সব এলোমেলো হয়ে যায়। বাবাও উত্তরে জানান, এ সব তো হয়েই থাকে। এ সবের মোকাবিলা তো করতেই হবে। যা যথেষ্ঠ কষ্টসাধ্য ব্যাপারও বটে। যেহেতু এই লড়াই যে মায়ার সাথে। যা তোমারা পাণ্ডবদের সাথে কৌরবদের কোনও লড়াই নয়। পাণ্ডবরা তো কোনও প্রকারের লড়াই-ই করে না। তারা কেনই বা লড়বে? তা হলে তো তারা হিংসক হয়ে যাবে। বাবার শিক্ষায় তো হিংসার কোনও পাঠই নেই। এই বাস্তব সত্যটা যা অনেকেই তা বুঝতে পারে না। বাবা কেবলমাত্র যুক্তি সহকারে এই পাঠই পড়ান, স্মরণের যাত্রায় থাকলে, মায়ার আক্রমণ থেকে রেহাই পাবে। এর পিছনেও এক কাহিনী আছে - বাবা যখন জানতে চায়, সুখ আর দুঃখের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে কোনটা দরকার? আমরা আত্মারাই তখন সুখ চেয়েছিলাম। যে কারনে সত্যযুগে কোনও প্রকারের দুঃখই থাকে না। তোমাদের এই ধারণা তো হয়েই গেছে, বর্তমান সময়ে সব সীতারূপী (আত্মা অর্থে সীতা) আত্মারা রাবণের শোক-বাটিকায় আবদ্ধ হয়ে আছে। যাকে (লঙ্কা বা শ্রীলঙ্কা) বর্ণনা করা হয় যে, চারিদিকে সাগরের মধ্যে রাবণের লঙ্কার রাজ্য। বাস্তবে সবারই তো এখন রাবণের কয়েদ-খানায় বন্দী দশার অবস্থা। তাই তো সবার সদ্গতির জন্য এই দুনিয়ায় বাবার আগমন ঘটে। যেহেতু সবাই (তার বাচ্চারা) যেখানে শোকবাটীকায় রয়েছে। সুখ তো স্বর্গে আর দুঃখ নরকে। নরকের অর্থই হলো শোকবাটীকা। আর স্বর্গের অর্থ অশোক। দুটোর মধ্যে কত তফাৎ! তাই তো তোমাদের বাচ্চাদের কষ্ট করেও বাবার স্মরণে থাকা উচিত - যাতে হাসি-খুশীতে কাটাতে পারো। বাবার নির্দেশিত রাস্তায় না চললে সে অবশ্যই অপ্রিয় কুলাঙ্গার হিসাবে গণ্য হবে। যার ফল স্বরূপ অতি সাধারন প্রজায় পরিগণিত হবে। আর বাবার প্রিয় বাচ্চা হলে, রাজধানীতে স্থান হয়। তাই তো রাজধানীতে আসতে চাইলে অবশ্যই শ্রীমতের অনুসারে চলতে হবে। তবে তা কৃষ্ণ মত অনুসারে মোটেই নয়। এই দুটো ধারাকেই তো মত বা শাসনতন্ত্র বলা হয়। এখন তোমরা যে শ্রীমত অনুসারে চলবে- তার ফল প্রাপ্তি হয় সত্যযুগে। তারপর আবার দ্বাপর যুগে এসে রাবণের মতে (শাসনতন্ত্রে) চলতে হয়। তখন রাবণের মতে চলতে চলতে অসুর স্বভাবে পরিনত হয়ে পড়ে। যেখানে বাবার থেকে তোমরা ঈশ্বরীয় মত (শাসনতন্ত্র) পেয়ে থাকো। এই ঈশ্বরীয় মত দিতে পারেন এক ও একমাত্র শিববাবাই। যিনি প্রকৃত অর্থে ঈশ্বর। এই ঈশ্বরীয় মতের দ্বারাই তোমরা অতি পবিত্র-পুণ্যবান হতে পারো। আর পাপের প্রধান কারণ, বিষয় সাগরে হাবুডুবু খাওয়া। দেবতারা বিষয় সাগরে হাবুডুবু খায় না কখনও। হয়ত বলতে পারো কি, দেবতাদের কি কোনও সন্তানাদি থাকে না ? সন্তানাদি তাদের অবশ্যই থাকে। কিন্তু যেহেতু তারা বিকারহীন ও পবিত্র দুনিয়ায় থাকে, তা সমাধা হয় সম্পূর্ণ নির্বিকারী ভাবে। সত্যযুগ বা স্বর্গে বিকারের অংশ মাত্রও থাকে না। বাবাই তা বোঝান, দেবতারা কেবল নিজেদেরকে আত্ম-অভিমানী ভাবে রাখেন। এমন কি সেখানে পরমাত্ম-অভিমানীও হবার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বর্তমানের তোমাদেরকে আত্ম-অভিমানী ও পরমাত্ম-অভিমানী দুই রূপেই থাকতে হয়। প্রথমে তো দুই রূপে থেকেই অভ্যাস করতে হয়- তারপর সত্যযুগে পরমাত্মার সাথে কোনও সম্পর্কই আর থাকে না। আত্মার তো তখন এই জ্ঞান থাকেই যে, আত্মাই পুরোনো শরীর ছেড়ে আবার নতুন শরীর ধারণ করতে হবে। তারও অগ্রিম আভাস পেয়ে যায় আত্মা, কখন পুরোনো শরীর ছেড়ে নতুন শরীর ধারণ করতে হবে। বাচ্চার জন্ম হবার আগেও তার পূর্ব সাক্ষ্যাৎকারও হয়। যেখানে যোগবলের দ্বারা তোমরা সম্পূর্ণ বিশ্বেরই মালিকানা পেয়ে যাও- সেখানে যোগ বলের দ্বারা কি বাচ্চার জন্ম হওয়া অসম্ভব ? যোগবলের শক্তির সাহায্যে যে কোনও জিনিষকেই তোমরা পবিত্র-পাবন বানাতে পারো। অথচ তোমরা সেই যোগের স্মরণকেই বার বার ভুলে যাও। আবার কেউ কেউ বা তাতেই অভ্যস্ত হয়ে যাও। অনেক সন্ন্যাসী লোকেরা ভোজনকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। তাই ভোজনের সময় অনেক মন্ত্র আদি পাঠ করে, তারপর তা গ্রহন করে। তোমাদেেরকেও তো সে সব নিয়মাবলী জানানো আছে। মাছ-মাংস, মদ্য-নেশা -এ সব কিছুই খাওয়া চলবে না। যেহেতু তোমরা দেবতায় পরিনত হতে যাচ্ছো। দেবতারা কখনও নোংরা পরিবেশে খাবার খায় না। এই ধরণের পবিত্রতা পালন করতে হবে। বাবা তার বাচ্চাদের জানাচ্ছেন, ওনার দ্বারাই ওনার থেকে আমরা যা জানতে পারি ওনার সম্বন্ধে, -তাতে জাগতিক ও অতি-জাগতিকের সব কিছুই জানা হয়ে যায়। যার বাইরে আর কিছু জানার থাকেই না। সত্যযুগের পঠন-পাঠন অন্য ধরণের। এই মৃত্যুলোকের পঠন- পাঠন সেখানে কাজে লাগে না। তাই এই বিদ্যার পরিসমাপ্তি ঘটে এখানেই। এই মৃত্যলোকের যা কিছু রীতি-নীতি, ব্যাবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সব কিছুরই পরিসমাপ্তি ঘটলেই, তারপরেই অমরলোকের শুরু হয়। তাই তো বাচ্চাদের এত উৎসাহের সঞ্চার হয়, এই জ্ঞাণ ধারণের ক্ষেত্রে। তোমরা বাচ্চারাই, একদা সেই অমরলোকের অধিকারী ছিলে। তাই তো সেই অতিন্দ্রয় সুখ ও পরম সুখের কথা ভেবেই তোমাদের বাচ্চাদেরকে সেই আনন্দেই থাকা উচিত। যেহেতু পরমপিতা পরমাত্মার আমরা যেমন একাধারে বাচ্চারূপে, আবার অপরদিকে তেমনি ছাত্রও বটে আমরা। এর পরের পর্যায়ে পরমপিতা পরমাত্মা নিজেই তার সঙ্গে আমাদের আপন ঘরে নিয়ে যাবেন- যাকে বলা হয় পরমানন্দ। সত্যযুগে এই সব কর্ম-কাণ্ডের ব্যাপার থাকে না। এ সব তো কেবল বর্তমান সময়ের কথা। বর্তমানের এই সময়টা ঈশ্বরীয় যুগ গঠনের যুগ। আমরা যা শুনে থাকি, কৃষ্ণের গোপ-গোপীদের অতিন্দ্রীয় সুখের কথা, তাও এই সময়কালেরই কথা। এই সময়েই পরমধাম থেকে আমাদের বাবা আসেন- বাবা, শিক্ষক, গুরু রূপে। এই তিন রূপেই উনি বাচ্চাদের সেবা-শুশ্রুষা করেন। যাতে ওনার প্রতি বাচ্চাদের আর অভিমান না থাকে। উনি তা জানিয়েও দেন, বাচ্চাদের সেবাধারী হয়ে, তাদেরকে যোগ্য অবস্থায় সঠিক দিশায় পৌঁছে দিয়ে, যার যা প্রাপ্য তার ব্যবস্থা করে - তবেই উনি নির্বাণধামে গিয়ে বিশ্রাম নেবেন। বাচ্চাদের নিমিত্তে এই বাবা কত বড় সেবাধারী! নীতিমূলক নাটকের এক মূর্ত চরিত্রের অনাদি এই অভিনেতা সর্বদাই তার বাচ্চাদের প্রতি যেমন অনুগত তেমনি কর্তব্য-পরায়ণ। যদিও এই বাবা নিরাকার কিন্তু উনি নিঃঅহংকারী। বাচ্চাদেরও সেই পাঠই পড়ান। এই ধরনের উচ্চ-মার্গের পাঠ আর কারও জানাই নেই। তাই এই সব সূত্র তো অন্য কেউ জানাতেই পারবে না। সাধারণ মনুষ্যদের যা দূর-অস্ত্য। যেহেতু এ সব কোনও গুরুমুখী বিদ্যা নয়। এক গুরুর তো অনেক সংখ্যায় শিষ্য থাকে। তা তো আর একজনের হয় না। কিন্তু এই বাবা সব পতিত-পাপীকেই পুন্যবান-পাবনে পরিনত করেন। এই ভাবেই উনি আদি-সনাতন দেবী-দেবতা ধর্মের স্থাপনা করান। কল্পে-কল্পে, প্রতি কল্পেরই সঙ্গমে উনি আসেন ওনার কর্ম-কর্তব্য পালনের জন্য। তা বাচ্চারাও জানে - এর পূর্বের কল্পে, একই ভাবে, একই সময়ে, এই বাচ্চাদের সাথেই বাবার মিলন ঘটেছিল। ইনি এসেই পতিতদের পাবন অবস্থায় এনেছিলেন। যার প্রালব্ধ ২১ জন্মের জন্য পবিত্র পুণ্যবানের সমৃদ্ধি লাভ করে। বাচ্চাদের মধ্যে এইসব ধারণা ধারণ করে, অন্যদেরকেও তার প্রচার করা উচিত- বাবা বাচ্চাদেরকে কিভাবে কি বোঝান। কিভাবে বাবার থেকে আমরা ২১ জন্মের প্রালব্ধের আশীর্ব্বাদের বর্সা লাভ করি। এ সব যথার্থ ভাবে স্মরণে থাকলে, খুশী ও আত্মতুষ্টির আনন্দে থাকা যায়। যা পরম আনন্দের স্বাদ উপলব্ধি হয়। মাস্টার জ্ঞাণী হতে পারলেই স্বর্গীয়সুখ-পরমসুখের বরদান পাওয়া যায়। সত্যযুগে এই জ্ঞাণের কোনও প্রয়োগই নেই। সেখানে তো জ্ঞাণ-স্বরূপ হয়ে দর্শনার্থীর ভূমিকায় থাকতে হয়। এমন কি লক্ষ্মী-নারায়ণও সেই জ্ঞাণ প্রয়োগের কোনও ব্যাপারই নেই। এনারা যদি তা প্রয়োগের মধ্যে আনতেন- তবে তো তা পরম্পরায় চলতেই থাকতো। তোমাদের বাচ্চাদের সঙ্গমের এই পরম আনন্দ- যা দেবতারাও পায় না। আচ্ছা !
    মিষ্টি মিষ্টি হারানিধি বাচ্চাদের ফিরে পাওয়া সিকিলধে বাচ্চাদেরকে মাতা-পিতা বাপদাদা স্মরণ করছেন আর জানাচ্ছেন তাদের স্নেহ-সুমন আর সু-প্রভাত। আত্মাদের রূহনী-বাবা আত্মারূপী রূহানী-বাচ্চাদেরকে জানায় নমস্কার।

    ধারণার জন্য মুখ্য সার :-

    ১) দৈবীগুণ ধারণ করে দেবতা হওয়ার লক্ষ্যে, খাওয়া-দাওয়ার শুদ্ধতার প্রতি সচেতনতা রাখতে হবে। পরিমিত সংযমী ও নিয়মসিদ্ধ ভাবে চলতে হবে। যোগবলের দ্বারা ভোজন সামগ্রীকে দৃষ্টির দ্বারা শুদ্ধ করে- তারপরেই ভোজন স্বীকার করা উচিত।

    ২) পরমপিতা পরমাত্মার বাচ্চা ও ছাত্র আমরা- যিঁনি আমাদেরকে আপন ঘরে নিয়ে যাবেন, এই খুশীর পরম সুখ, পরম আনন্দ অনুভবের স্মৃতি সর্বক্ষণ অনুভব করতে হবে।

    বরদান :- 

    বিশ্ব-রঙ্গমঞ্চের এই অবিনাশী নাটকের ঢাল স্বরূপ (রক্ষাকারী) বাবাকে সামনে রেখে, সর্বদা সেই খুশীর স্বাদে ভরপুর থেকে শক্তিশালী আত্মায় পরিণত হও (ভব)।

    খুশীরূপী ভোজন স্বীকার করলে আত্মা তাকে শক্তিশালী বানিয়ে দেয়। তা তো প্রবাদই আছে, খুশীর খোরাক সর্ব্বোত্তম। এই নিমিত্তে, অবিনাশী নাটকের ঢাল (রক্ষাকারী) বাবাকে (নিয়ম নীতিকে) সর্ব কার্যেই প্রয়োগ করো। সব কিছুই যে অবিনাশী নাটকের ঘটনাচক্র তা স্মৃতিতে থাকলে কোনও কিছুই বিবর্ণ বা নির্জীব হয় না বা খুশীও হারিয়ে যায় না- যেহেতু, এই নাটকের যা কিছু- সম্পূর্ণটাই কল্যাণকারী। তাই যা অকল্যাণকারী দৃশ্য মনে হয়- তার পিছনেও কোনও না কোনও কল্যাণ অবশ্যই আছে। এ কথা স্মরণে রাখলে অবশ্যই খুশীতে থাকা যায়।

    স্লোগান :- 

    পরচিন্তন আর পরদর্শণের মতো ময়লার থেকে দূরে থাকতে পারা আত্মারাই প্রকৃত হীরে তুল্য বাচ্চা !


    ***OM SHANTI***