BK Murli 22 May 2016 Bengali
২২-০৫-১৬ প্রাতঃ মুরলী “ওম শান্তি” বাপদাদা মধুবন রিভাইসঃ ০২-১০-৮১
সদা মিলনের দোলায় দুলবার আধার
আজ চতুর্দিকের যে সব বাচ্চারা স্মরণে থাকে, তাদেরকে বাপাদাদা সাকারে বা আকারে সম্মুখে দেখতে দেখতে স্মরণ করবার রেসপন্স পদম গুণা স্মরণ ও ভালোবাসা (ইয়াদ পেয়ার) জানাচ্ছেন । কেউ শরীর দ্বারা, কেউ মনের দ্বারা এক মিলনের সংকল্পে একেরই স্মরণে স্থিত রয়েছে। বাপদাদা খাজানা তো দিয়েই দিয়েছেন। সাকারের দ্বারা, আকারে অব্যক্ত রূপ দ্বারা সর্ব খাজানার মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। যখন সকল খাজানার মালিক হয়ে গেছো, তাহলে আর বাকি কি থাকলো ? বাকি থাকলো কিছু ? বাপদাদা তো কেবল মালিকদের মালেকম সলাম ( মালিকদরকে সলাম) জানাতে এসেছেন। সেভাবে বলতে গেলে মালিক হয়েই গেছো, বাকি আর কি রয়ে গেল ? যারা শুনছে তাদের হিসাব বের করো। প্রচুর শুনে নিয়েছো, প্রচুর শুনিয়েও দিয়েছো। শুনতে শুনতে বক্তাও হয়ে গেছো। তবে যারা শোনায় তারা আর কি শুনতে চায় ? তোমাদেরই তো গীত রয়েছে, অনুভবের গীতই তো গেয়ে থাকো, ‘যা পাওয়ার ছিল, তা তো পেয়েই গেছি, আর কি কিছু বাকি থাকল !’ এটা কাদের গীত ? ব্রহ্মাবাবার নাকি ব্রাহ্মণদেরও ? এই গীত তোমাদের তো ? তো বাবাও জানতে চাইছেন -- আর কোন্ কাজটা বাকি রয়েছে ? বাবা তোমাদের সাথে মিশে গেছেন আর তোমরা বাবার সাথে সমায়িত হয়ে গেছো’ যখন সমায়িত হয়ে গেছো তবে আর কি বাকি থেকে গেলো ? সমায়িত হয় গেছো, নাকি এখনও সমায়িত হচ্ছো ? কি বলবে ? নদী আর সাগরের মেলা তো হয়েই গেছে না ! সমায়িত হওয়া অর্থাৎ মিলন উদযাপন করা, তো মিলন উদযাপন করে নিয়েছ তো ? সাগর গঙ্গার থেকে পৃথক নয়। গঙ্গা সাগরের হল অবিনাশী মেলা। সমায়িত হয়ে গেলে অর্থাৎ সমান হয়ে গেলে। সমান যারা হয়ে যায়, বাপদাদা তাদরকে স্নেহের অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
এবারে বাপদাদা কেবলমাত্র দেখতেই এসেছেন। মালিকদের আজ্ঞা মেনে মিলিত বা সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। মালিকদের তো না করতে পারা যায় না। তো ‘আজ্ঞে হাজির’ ( জী হাজির)-এর পাঠ পড়ে হাজির হয়ে গেছে। এই রকমই ‘তত ত্বম’। বাপদাদা আদিকাল থেকে ‘তত্ ত্বম- এর বরদান দিয়ে যাচ্ছেন। সংকল্প এবং স্বরূপ দুটোতেই বরদানী হয়ে গেছ। ধর্ম এবং কর্ম দুটোতেই ‘তত্ ত্বম’- এর বরদানী হয়ে গেছ। এইরূপ বরদানী সদা সমীপ এবং সমায়িত হওয়ার অনুভবী হয়ে থাকে। বাপদাদা এইরূপ সমীপ এবং সমান বাচ্চাদেরকে দেখে উল্লসিত হন। অমৃতবেলা থেকে শুরু করে দিনের সমাপ্তি পর্যন্ত কেবল একটিই শব্দ ধর্মে এবং কর্মে যদি নিয়ে আসো, তবে মিলনের আনন্দে দোলনাতে দুলতে থাকবে। যে মিলনের দোলাতে প্রকৃতি এবং মায়া উভয়ই তোমাদের দোলনাকে দোলানোর দাসী হয়ে যাবে। সকল খাজানা তোমাদের শ্রেষ্ঠ দোলনার শৃঙ্গার হয়ে যাবে। গুণ বা শক্তি গুলিকে পরিশ্রম করে ধারণ করতে হবে না। বরং এগুলি সবই তোমাদের শৃঙ্গার হয়ে তোমাদের সামনে স্বততঃই এমন মিলনের দোলা, যাতে বাবা এবং তুমি- সমান অর্থাৎ মিশে গিয়ে থাকবে। এইরূপ দোলনাতে সদা দুলবার আধার হল একটিই শব্দ- ‘বাপ সমান’।
সমান না হলে সমায়িত হতে পারবে না। যদি সমায়িত হওয়া না আসে তবে সঙ্গম যুগকেই ব্যর্থ করে ফলবে। কেননা সঙ্গম যুগই হল নদীর সাগরে মিশে যাওয়ার মেলা। মেলা অর্থাৎ মিশে যাওয়া। মিলন পালন করা। তো সমায়িত বা মিশে যাওয়া আসে ? মেলা যদি পালন না করতে তবে কি করতে ? ঝামেলা করতে। তো হয় ঝামেলা, নয় তো মেলা। বাচ্চারা বলে আমরা একা, কিন্তু বাবা বলেন একা হবেই না। যাকে তোমরা একা হয়ে যাওয়া বলো তাতেও সাথে রয়েছে। সঙ্গম যুগ হলই কম্বাইন্ড থাকার যুগ। বাবার থেকে তো একলা হয়ে যেতে পারবে না ! চিরকালের সাথী তিনি। বাকি বাচ্চারা ঝামেলায় ফেঁসে যায়। আর ঝামেলাও অনেক, একটা নয়। মেলা হল এক, আর ঝামেলা হল অনেক। তো মেলাতে যদি থাকো, তবে ঝামেলা লা সমাপ্ত হয়ে যাবে। এখন সম্পন্নতার প্রলব্ধি হও। অল্প কালের সম্পূর্ণতার সম্পন্নতার প্রালব্ধকে অনুভবে আনো। আচ্ছা --
এমন বাপ সমান, সদা বাবার সাথে মিলনের দোলনাতে দুলতে থাকা, যা পাওয়ার ছিল তা পেয়ে গেছি-এইরূপ সর্ব প্রাপ্তি স্বরূপ সর্বদা প্রতিটি সংকল্প এবং বোলে, কর্মে আজ্ঞে হুজুর (জী হুজুর) হাজিরকারী এইরূপ সর্ব শ্রেষ্ঠ আত্মাদেরকে, সাকার দ্বারা বা আকার দ্বারা মিলিত হওয়া দেশ বিদেশের সকল আত্মাদেরকে, বালক সো মালিকদেরকে (যে বালক সে-ই মালিক) বাবার মালেকম সলাম এবং স্মরণের সাথে স্নেহ সুমন। আর তাঁর সাথে শ্রেষ্ঠ আত্মাদেরকে নমস্কার।
প্রাণ অব্যক্ত বাপদাদার মধুর সাক্ষাৎ পার্টিদের সাথেঃ -
কর্ণাটক জোন -
১) সকলে সর্বদা সাক্ষী স্থিতিতে স্থিত হয়ে প্রতিটি কর্ম করো ? যারা সাক্ষী হয়ে কর্ম করে তাদের স্বততঃই বাবার সাথী ভাবের অনুভবও হবে। সাক্ষী নয় তো বাবাও সাথী হবে না। সেই জন্য সর্বদা সাক্ষী অবস্থাতে স্থিত থাকো। দেহের থেকেও সাক্ষী। যখন দেহের সম্বন্ধ এবং অন্যদের দেহের প্রতিও সাক্ষী হয়ে যাও, তো স্বততঃই এই পুরানো দুনিয়া থেকেও সাক্ষী হয়ে যাবে। দেখেও, সম্পর্কে এসেও সর্বদা অনন্য বা পৃথক এবং প্রিয় হবে। এই ষ্টেজই সহজ যোগীর অনুভব করায় - তো সদা সাক্ষী তাকেই বলা হয়, যে সাথে থেকেও নির্লিপ্ত(নির্লেপ) । আত্মা নির্লেপ নয়, কিন্তু আত্ম অভিমানী স্টেজ হল নির্লেপ অর্থাৎ মায়ার লেপ বা আকর্ষণ থেকে উর্ধে। পৃথক(ন্যারা) অর্থাৎ নির্লেপ। তো সদা এমন অবস্থাতে স্থিত থাকো ? কোনো প্রকারের মায়ার প্রহার যাতে না হয়। বাবার উপরে বলিহার যে হয়ে যায় সে মায়ার প্রহার থেকে চিরকালের জন্য সুরক্ষিত থাকবে। যে বলিহার হয়ে যায় মায়ার প্রহার বা আঘাত তার উপরে নেমে আসতে পারে না। তো এইরূপ হয়েছো তো ? যেমন ফার্স্ট-এর অর্থ হল ফার্স্ট বা দ্রুত যাওয়া । তো এই স্থিতিতে সদা ফার্স্ট । সদা খুশীতে থাকো, সদা খুশনসীব থাকো। আচ্ছা।
২) যেমন বাবার গুণের বর্ণন করো, তেমনই নিজের মধ্যেও সকল গুণ অনুভব করো ? প্রতিটি গুণের অনুভব-- শুধুই বর্ণন নয়, বরং অনুভব। যখন সুখ স্বরূপ হয়ে যাবে, তো সুখ স্বরূপ আত্মা দ্বারা সুখের কিরণ বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। কেননা মাস্টার জ্ঞানসূর্য হলে তোমরা। যেমন সূর্যের কিরণ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে যায়, তেমনি (তোমাদের) জ্ঞানসূর্যের বাচ্চাদের জ্ঞান, সুখ, আনন্দের কিরণ সকল আত্মাদের কাছে পৌঁছে যাবে। যত উঁচু স্থান এবং স্থিতিতে থাকবে, ততই চতুর্দিকে স্বততঃই ছড়িয়ে যেতে থাকবে। তো এমন অনুভবী মূরত তো তোমরা ? শোনা এবং শোনানো তো অনেকই হল, এখন অনুভবকে বাড়াও। বলা অর্থাত্ স্বরূপ বানানো, শোনা অর্থাত্ স্বরূপ হওয়া।
৩) সদা খুশীর খাজানার দ্বারা খেলো তো ? খুশীও হল একটি খাজানা, যে খাজানার দ্বারা অনেক আত্মাকে সমৃদ্ধশালী বানাতে পারো। আজকাল এই বিশেষ খাজানাটির বিশেষ আবশ্যক। আর সবই আছে, কেবল খুশী নেই। তোমরা তো খুশীর খনি পেয়ে গেছ। অগুনিত খাজানা পেয়ে গেছ। খুশীর খাজানারও তো কত রকমের ! কখনও এই বিষয়ে তো কখনো আর একটি বিষয়ে খুশী। কখন বালক ভাবের খুশী, কখনো মালিক ভাবের খুশী। কত রকমের খুশীর খাজানা পেয়েছ। সে সব বর্ণন করে অন্যদরও সমৃদ্ধ করতে পারো। তো এইসব খাজানাকে সদা বজায় রাখো আর সদা খাজানার মালিক হও। সদা বাবার দ্বারা প্রাপ্ত শক্তি গুলিকে কার্যে লাগিয়ে যাও। বাবা তো শক্তি গুলি দিয়েই দিয়েছেন। এখন শুধু সেগুলিকে কাজে লাগাও। পেয়ে গেছি এই আনন্দেই কেবল থেকো না, যা কিছু পেয়েছো সেগুলি নিজের প্রতি এবং সকলের প্রতি ব্যবহার করো তো সদা সমৃদ্ধশালী অনুভব করবে।
৪) সকলেই বরদানী আত্মা তো ? এই সময় বিশেষ ভাবে ভারতে কাকে স্মরণ করা হচ্ছে ? বরদানীদের। দেবী অর্থাৎ বরদানী দেবীদেরকে বিশেষ বরদানী রূপে স্মরণ করা হয়। তো এমন মনে হয় কি যে আমাকে স্মরণ করছে ? অনুভব হয় ? বরদানী মূরত হওয়ার জন্য কোন্ বিশেষত্বটির প্রয়োজন ? তোমরা সবাই বরদানী মূরত তো ? বরদানী মূরতের বিশেষত্ব কোনটি ? তারা সর্বদা বাবার সমান এবং সমীপ থাকবে। আর যদি কখনো বাপ সমান কখনো নয় - নিজেরই পুরুষার্থী নিজে হলে বরদানী তো আর হতে পারবে না। কেননা বাবা পুরুষার্থ করেন না, বরং তাঁর হল সম্পন্ন স্বরূপ। তো যে আনেক পুরুষার্থ করে সে হল ছোটো বাচ্চা। বাপ সমান নয়। সমান অর্থাৎ সম্পন্ন। এইরূপ যে সদা সম্পন্ন হবে সে-ই বরদানী হবে। আচ্ছা।
অব্যক্ত মুরলী থেকে নির্বাচিত মহাবাক্য (প্রশ্নোত্তর)-
প্রশ্ন- পূর্ব জন্মের হিসাব নিকাশের বোঝাকে যারা সমাপ্ত করে তারাও বর্তমানে কোন্ বোঝা নিজের ওপরে চাপিয়ে নেয় ?
উত্তর- নিজেকে ব্রহ্মকুমার কুমারী বা বিশ্ব সেবাধারী বলবার পরেও কেউ যদি বিকল্প বা বিকর্ম করে, তো তার ওপরে শতগুণিতক বঝো চেপে যায়। কেউ নিজ সস্কারের বশে, স্বভাবের বশে, জ্ঞান বুদ্ধির অভিমানের বশে নাম-সম্মানের স্বার্থের বশে, স্বভাবের বশে নিজেরই স্যালভেশন বা উদ্ধার পাওয়ার লোভের বশে, আলস্য বা অবহেলার বশে-এরূপ অনেক বোঝা চাপিয়ে নেয়। আর যদি নিজেকে সার্ভিসেবল বলছে অথচ উল্টো কর্ম করে ডিসসার্ভিসের পরিবেশ নির্মাণ করে এবং প্রকম্পন (ভাইব্রেশন) ছড়ানোর নিমিত্ত হয়ে ওঠে, তবে একটি বারের ডিসসার্ভিস প্রতিবারের সার্ভিসকে নষ্ট করে দেয়। সে হয়ত নিজে মনে করছে যে আমি অনেক সার্ভিস করছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খাতা কিন্তু খালিই হয়ে যায়।
প্রশ্ন -
যাদের খাতা খালি হবে, তার লক্ষণ কি হবে ?
পরবর্তী কালে তাদের শক্তি বা প্রাপ্তির অনুভব হবে না। অন্তরে সন্তুষ্টতা থাকবে না। সব সময় কোনো না কোনো পরিস্থিতি, ব্যক্তি, প্রকৃতি বা বৈভব স্থিতিকে আন্দোলিত করবার নিমিত্ত হবে। বাইরে থেকে হাসি খুশী বা পুরুষার্থী বলে মনে হবে, কিন্তু তারা অত্যন্ত ঝঞ্ঝাট ঝমেলার মধ্যে থাকবে।
প্রশ্ন -
নাম বা সম্মানের খাতা ফুল অথচ আর সব খাজানার খাতা, অনুভূতির খাতা যদি খালি হয়, তবে তার লক্ষণ কি হবে ?
উত্তর-
এইরূপ আত্মা নিজে বিঘ্নের বশবর্তী হওয়ার কারণে সেবার কার্যে বিঘ্ন রূপ হয়ে দাঁড়ায়। ২-- বোঝা (ওয়েট) বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক প্রকারের ব্যর্থ চিন্তন বা মানসিক অশান্তি রূপ অনেক রোগ জন্ম নিতে থাকে। ৩-- তাদের পুরুষার্থের গতিবেগ তীব্র হতে পারে না। তারা প্ল্যান বানাবে যে এটা করব, ওটা করব, কিন্তু সফল হতেই পারবে না। ৪-- এই রকম ওয়েট যুক্ত আত্মারা যারা বিঘ্ন রূপ বা ডিসসার্ভিসের নিমিত্ত হয়, বাবাকে অর্পণ করা নিজের তন-মন বা ঈশ্বরীয় সেবার্থে প্রাপ্ত ধন নিজের বিঘ্নের কারণে নষ্ট করে ফেলে। অর্থাৎ সফলতা প্রাপ্ত করতে পারে না। নষ্ট করার বোঝাও তাদের ওপরে চেপে যায়। সেইজন্য পাপের গহন গতিকেও ভালো ভাবে জেনে, বুঝে ব্যর্থ করে ফেলো না এবং ওজন কম করো। ধর্ম রাজপুরীতে যাওয়ার পূর্বে নিজের ধর্মরাজ হও। আচ্ছা। ওম্ শান্তি।
বরদান -
কারণকে নিবারণে পরিবর্তন করে সর্বদা এগিয়ে যাওয়া সমর্থী স্বরূপ ভব
জ্ঞান মার্গে যত এগিয়ে যাবে ততই মায়া বিঘ্ন ভিন্ন ভিন্ন রূপে পরীক্ষা নিতে আসবে। কেননা এই পরীক্ষা গুলিই হল এগিয়ে যাওয়ার সাধন(উপাদান), কখনোই পতনের জন্য নয়। কিন্তু নিবারণের পরিবর্তে কারণের পিছনেই চিন্তা করে সময় এবং শক্তির অপচয় হয়। কারণের পরিবর্তে নিবারণের বিষয়েই ভাবো এবং এক বাবার স্মরণে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে নিমগ্ন করো তবে সমর্থী স্বরূপ হয়ে নির্বিঘ্ন হয়ে যাবে।
শ্লোগান-
মহাদানী সে-যে নিজ দৃষ্টি, বৃত্তি এবং স্মৃতি শক্তির দ্বারা শান্তির অনুভব করায়।